আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে নারীর অবস্থা কেমন ছিল

 জাহেলিয়া যুগে পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল । পৃথিবীর  সর্বএ মানব সমাজ ছিল পথভ্রষ্ট।কোন জাতিই আল্লাহর  একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল না ।তারা নবী-রাসূলদের  প্রদর্শিত পথ ও শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। স্রষ্টার পরিবর্তে সৃষ্টিরই তারা উপাসনা করতো।

রোম ,পারস্য, গ্রিস ,মিসর ও ভারতবর্ষে চন্দ্র, সূর্য  ও তারকারাজী বিভিন্ন জড়পদার্থ এবং মূর্তিপূজা হতো।দেবদেবীদের সন্তুষ্ট রাখার  জন্য কখনো কখনো নিষ্পাপ লোকদের বলি দেয়া হতো ।বুদ্ধদেবের অনুসারীরা ও হিন্দু যোগীরা  বিভীন্ন প্রকার নগ্ন পূজায় লিপ্ত ছিল।পারস্যবাসীরা ছিল  অগ্নিউপাসক।তারা  ইয়াযদান ও আহেরমান নামক দুজন দেবতায়  বিশ্বাসী ছিল।

ইহুদি জাতিও ছিল পথভ্রষ্ট ।তারা ইয়াযদান ও আহেরমান নামক দু’জন দেবতায় বিশ্বাসী  ছিল। পারস্যবাসীরা  ছিল  অগ্নিউপাসক  ।ইহুদি জাতিও ছিল পথভ্রষ্ট।তারা তাওরাতের শিক্ষা ভুলে গিয়েছিল। তাদের একটি দল ওযায়ের (আ) কে আল্লাহর পুএ বলে বিশ্বাস করতো ।

তারা আল্লাহর কিতাবের বিকৃতি,ধর্মীয় নীতির  পরিবর্তন ,সত্য গোপন,সুদ গ্রহণ ও মিথ্যার পৃষ্টপোষকতা করতো।

অপরদিকে খ্রিষ্টানগণও  আল্লাহ তায়ালার  একত্ববাদের শিক্ষাকে  ভুলে গিয়েছিল ।তারা একত্ববাদের পরিবর্তে  িএত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করেছিল।তারা হযরত ঈসা (আ) কে আল্লাহর পুএ বলে বিশ্বাস করতো ।বৈরাগ্যবাদ ছিল তাদের ধর্মের মাপকাঠি ।দুনিয়ায় নৈতিক অধঃপতন  চরমে পৌছেছিল।মতামতের স্বাধীনতা  সে ধর্মে  ছিল না । মানব সন্তানদের সাথে  ইতর প্রাণির চেয়েও খারাপ  ব্যবহার করা হতো । শিক্ষা -দিক্ষার কোনো অগ্রগতি ছিলো না ।

সমাজে দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল ।দাস দাসিকে পণ্য দ্রব্যের ন্যায় হাট বাজারে  বেচাকেনা করা হতো ।তাদের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল শোচনীয়।শাসক কর্তৃক প্রজাদের ওপর  নির্যাতন চালানো  হতো। উওরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর  থেকে মধ্য ইউরোপ  পর্যন্ত তাতারীদের দাপট ছিল।

তারা ভারত ,ইরান ও ইউরোপে লুটতরাজ করতো ।পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকতো । কোন দেশেই শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজমান ছিল না । শাসকরা প্রজাদের মৌলিক অধিকার হরণ করতো ।

মোটকথা এশিয়া ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাসোপযোগি সকল  অঞ্চল  অন্ধকার ,মূর্খতা ,বিশৃঙ্খলা ,অরাজকতা  অনৈতিকতা ও নিরাপওাহীনতার সাগরে নিমজ্জিত ছিল।

জাহেলিয়া যুগে আরবের  অবস্থাঃ
জাহেলিয়া যুগে আরবের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয় । তারা মানবেতর  জীবনযাপন করতো । তারা আইন কানুনের কোনো প্রয়োজন মনে করতো না ।তারা বিশৃঙ্খলভাবে  জীবন যাপন করতো  আরবরা ছিল স্বাধিনচেতা। তাই তারা শাসনের কোনো পরোয়া করতো  না । তারা অসংখ্য গো েএ বিভক্ত ছিল।গো েএ গো েএ শএুতা ছিল তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।তুচ্ছ কারণে গো েএ গো েএ কলহ বেঁধে যেত  এবং তা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকতো । খুনের বদলা নেয়ার জন্য তারা যুদ্ধ করতো।

ইসলাম পূর্ব যুগে আরবে প্রায় ১৭০০ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।

সামাজিক অবস্থা 

ইসলামের  আর্বীভাবের পূর্বে  আরবের সামাজিক  অবস্থা ছিল  অত্যন্ত শোচনীয় । বিভিন্ন পাপাচার ,ব্যভিচার ,দুর্নীতি,কুসংস্কার ,অনাচার ,অরাজকতা,ঘৃণ্য আচার  অনুষ্ঠান  ও নিন্দনীয় কর্মকান্ডে কলূষিত হয়ে পড়েছিল সমাজ । গোএভিওিক আরব সমাজের দুটো পৃথক শ্রেণি মরুবাসী বেদুঈন  এবং শহরবাসি  আরবদের জীবনযাএার প্রণালি  ছিল  একই সূ্ েএ গাঁথা ।

মদ ও জুয়া:

ঐতিহাসিক খোদা বখশের মতে  অর্থাৎ মদ , জুয়া,ও নারী  এ তিনটি ছিল  আরবদের নিত্যব্যবহার্য বস্তু। মদ এবং নর্তকি  ছাড়া তাদের জীবন কল্পনাও করা যেত না ।তারা মদপানে আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল । মাদকাসক্ত আরবরা যেকোন গর্হিত কাজ করতে দ্বিধা করতো না । তৎকালিন  আরব দেশে মদ্যপানে  ও জুয়া খেলা  কত লোককে  যে সর্বস্বান্ত করেছে তার কোনো  ইয়াওা  নেই ।

নারীর অবস্থান :ঐতিহাসিকদের  প্রসিদ্ধ মতানুযায়ি সে যুগে  আরব , রোমান ও পারস্য  সাম্রাজ্যেসহ  সমগ্র বিশ্বে  সমভাবে নারীর  অবস্থা  ছিল সীমাহীন  অবমাননাকর ও হ্দয়বিদারক । তারা ভোগের সামগ্রি  ও অস্থাবর সম্পওি হিসেবে  পরিগণিত হতো । সমাজে তাদের কোনো  রকম  মান মর্যাদা বা অধিকার ছিল না । একজন পুরুষ যত খুশি বিয়ে করতো  এবং যত খুশি তালাক দিতে পারতো । তৎকালিন আরবে চার ধরনের বিবাহ ব্যবস্থা  প্রচলিত ছিল।

প্রথমত বর্তমান সমাজের মতো এক স্বামি -পত্নি বিয়ে, এটা সমাজের শহরবাসি  অভিজাত  শ্রেণির মাঝে প্রচলিত ছিল।

দ্বীতিয়ত এক ব্যক্তি  একাধিক  বধু  গ্রহণ করতো । অনেক সময় যাকে ভালো লাগতো না  তাকে তালাক দিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করতো । আবার মেধাবী  ও সাহসী  সন্তান লাভের আশায় অনেক স্বামি স্বীয় পত্নিকে বিখ্যাত সাহসী  বীর ও নেতৃস্তানীয়  লোকের অঙ্গশায়ীনি হতে পাঠাতো।যাতে তার বউ বীর সন্তানের  শুক্র নিয়ে গর্ভবতি হয়।   বউ অন্যের দ্বারা গর্ভবতি হয়ে পুনরায় স্বামি গৃহে  ফিরে আসত।  এতে দোষের কিছু মনে করা হতো না । আবার অনেক সময় স্বামি  এরকম  বউদের তাড়িয়ে দিত । ফলে মহিলার জীবনে  চরম দুর্দশা  নেমে আসত ।

তৃতিয়তঃ একজন পত্নিলোক  একাধিক পুরুষকে বিয়ে করতো । কয়েক বন্ধু একএ হয়ে একজন মহিলাকে  বিয়ে করতে পারতো। এতে করে  সন্তানের  পিতৃত্ব নির্ধারণে স্বভাবতেই জটিলতার সৃষ্টি হতো । এ জটিলতার সমাধানকল্পে রমণীটি গর্ভবতি হওয়ার পর যাকে গর্ভস্ত সন্তানের পিতা হিসেবে  নির্দেশ করতো  নেস ব্যক্তিই উক্ত সন্তানের পিতা বলে গণ্য হতো ।

কন্যা সন্তানদের অবস্থাঃ

জাহেলি যুগে কোনো ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানের জন্মে খুশি হতো না ।কন্যার জন্ম সংবাদ দেয়া হলে তাদের চেহারা লজ্জায় কালো হয়ে যেত।এটা তাদের নিকট ছিল  এক চরম লজ্জার ব্যপার । অনেক পিতা  এ চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য ,আবার অনেকে দারিদ্র্যের ভয়ে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও  কুন্ঠাবোধ করতো না ।

সুদপ্রথা: 

জাহেলি যুগের সমাজব্যবস্থায় সুদ ছিল শোষনের হাতিয়ার ।সুদের পরিমান ছিল কখনো কখনো একশো ভাগ আবার বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে স্থানভেদে দুশ ভাগ পর্যন্ত।প্রাক  ইসলাম যুগে  আরবে ইহুদিরা সুদের ব্যবসায় করতো । তারা দরিদ্র আরবদের থেকে  এত উচ্চহারে সুদ আদায় করতো ,অনেক সময় ধার গ্রহিতার স্থাবর অস্থাবর সম্পওির সাথে  পত্নি-পুএ -কন্যাকেও ধারদাতা জোর করে নিয়ে যেত।

ব্যভিচার ঃ 

ব্যভিচার বেহায়াপনা  আরব সমাজে  একটি গ্রহনযোগ্য ব্যবস্থার  অর্ন্তভুক্ত ছিল । অর্থের বিনিময়ে স্বল্প সময়ের জন্য নারী-পুরুষের জৈবিক মিলন সামাজিকভাবে স্বিকৃত ছিল। ব্যভিচারের মাএা এতো অধিক ছিল স্বামি স্বীয় বউকে  অন্য লোকের সন্তান স্বগর্ভে ধারনের অনুমতি দিত ।পিতার মৃত্যুর পর সন্তানরা বিমাতাকে পত্নি রুপে গ্রহণ করতো । একই সময়ে একজন বধুলোকের একাধিক স্বামি থাকতো ।অনেক সময় ভ্রাতা ভগ্নি এবং সৎমা ও পু্ েএর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হতো

সামাজিক অনাচার ,ব্যভিচার , লাম্পট্য,মদ্যপান ও জুয়া প্রভৃতি নানা অত্যাচারে আরব সমাজ কলুষিত ছিল।

কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে কুসংস্কারের বশবর্তি আরবরা তীরের সাহায্যে দেব মুর্তির সাথে পরামর্শ করে নিত । কোন লোক মারা গেলে তার উট বা ঘোড়া তার কবরের পাশে  এ বিশ্বাসে বেধে রাখা হতো ।মৃতব্যক্তি কোন এক সময় কবর থেকে উঠে কবরের পার্শে এ বিশ্বাসে  বেধে রাখা হতো ,

মৃতব্যক্তি কোন এক সময় কবর থেকে উঠে কবরের পার্শে বেধে রাখা  সওয়ারির পিঠে  আরোহণ করে  অঙ্গাত গন্তব্যে যাএা করবে ।

বিয়ে প্রথা :

প্রাক ইসলাম সমাজব্যবস্থায় বিয়েপ্রথা বিপর্যস্ত ছিল।পুরুষরা যেমন  একাধিক পত্নি ,উপপত্নি ,দাসদাসি রাখতে পারতো ,তেমনি নারীরাও একাধিক পতি রাখতে  অথবা তালাক দিতে পারতো।

শুধু তাই নয় ভাই বোনে বিয়ে  এবং বিমাতাকে বিয়ে করার কুপ্রথাও তাদের মাঝে  চালু ছিল ।

রাজনৈতিক অবস্থা ঃ

প্রাক ইসলাম যুগে  আরবের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল  চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলায় ভরপুর । না ছিল কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা । না ছিল কোন সংবিধান ।মনগড়া মতবাদের ছায়ায় আদিম যুগের বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ গো িএয় শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছিল

Leave a Comment