ঈদে মিলাদুন্নবী কি

পরম করুণাময় আল্লাহর  নামে শুরু করছি ।তার জন্যই সকল প্রশংসা।সালাত ও সালাম মহান  রাসুল ,আল্লাহর হাবীব ও মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মদ (সাঃ) ওয়া সাল্লাম,তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গিদের উপর।আজকের বিশ্বে মুসলিম  উম্মার  অন্যতম  উৎসবের দিন হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবি।সারা বিশ্বের বহু মুসলিম  অত্যন্ত জাকজমক ,ভক্তি ,ও মর্যাদার সাথে  আরবি বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ এই ‘‘ঈদে মিলাদুন্নবি ‘’।সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে  আরবি  বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে এই ঈদে মীলাদুন্নবি বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন ।কিন্তু অধিকাংশ  মুসলিমই  ‘‘ঈদের ‘’ উৎপওি ও বিকাশের ইতিহাসের  সাথে পরিচিত নন।যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে  প্রচলন করেছিলেন তাদের পরিচয় ও আমাদের  অধিকাংশের  অজানা রয়েছে।

ঈদে মীলাদুন্নবীঃপরিচিতিঃ 

ক)মীলাদ শব্দের অর্থ ও ব্যাখা ঃমীলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ ঃজন্মসময়।এই অর্থে মাওলিদ শব্দটিও  ব্যবহ্রত হয় । আল্লামা ইবনে মানযুর তার সুপ্রসিদ্ধ আরবি অভিধান লিসানুল আরবে লিখেছেন লোকটির মিলাদ যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম । স্বভাবতই মুসলিমগণ ‘‘মীলাদ’’বা মীলাদুন্নবী বলতে শুধুমাএ রাসুল (সা) এর জন্মের সময়ের আলোচনা করা জন্ম কথা বলা বোঝান না । বরং তারা মিলাদুন্নবি বলতে রাসুল(স) এর জন্মের সময় বা জন্মদিনকে বিশেষ পদ্ধতিতে উদযাপন করাকেই বোঝায়   ।আমরা এই আলোচনায়  ‘‘মীলাদ’’বা ঈদে মীলাদুন্নবি বলতে রাসুল (সা) এর জন্ম উদযাপন বুঝাব ।

তার জন্ম উপলক্ষে কোন আনন্দ প্রকাশ ,তা তার জন্মদিনেই হোক বা জন্ম উপলক্ষে অন্য কোন দিনেই হোক যে কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার জন্ম উপলক্ষে অন্য কোন দিনেই হোক যে কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার জন্ম পালন করাকে আমরা মীলাদ বলে বোঝাব ।শুধুমাএ তার জীবনি পাঠ,বা জীবনি আলোচনা ,তার বাণি তার শরিয়াত বা তার হাদিস আলোচনা ,তার আকৃতি বা প্রকৃতি আলোচনা ,তার বানী ,তার শরীআত বা তার হাদিস আলোচনা ,তার আকৃতি বা প্রকৃতি আলোচনা করা মূলত :মুসলিম সমাজে মীলাদ বলে গণ্য নয়। বরং জন্ম উদযাপন বা পালন বা জন্ম উপলক্ষে

কিছু অনুষ্ঠান করাই মীলাদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী হিসেবে মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে পরিচিত ।

মীলাদ বা রাসূল (সা) জন্মদিনঃ

মীলাদ অনুষ্ঠান যেহেতু রাসুল্লাহ (সা) এর জন্মদিন  পালন কেন্দ্রিক ,তাই প্রথমেই আমরা তার জন্মদিন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব । স্বভাবত:ই আমরা যে কোন  ইসলামি আলোচনা কুরআনুল কারিমে রাসূল (সা) এর মীলাদ অর্থাৎ তার জন্ম ,জন্ম সময় বা জন্ম উদযাপ্ন বা পালন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি ।কুরআন করিমে  পূর্ববতী কোন কোন নবীর জন্মের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ,তবে কোথাও কোনদিন কোনদিন ,তারিখ, মাস  উল্লেখ  করা হয় নি । অনুরুপভাবে মীলাদ পালন করতে ,,অর্থাৎ কারো জন্ম উদযাপন করতে  বা জন্ম উদযাপন করতে বা জন্ম উপলক্ষে  আলোচনার মাজলিস করতে বা জন্ম উপলক্ষে  আলোচনার মাজলিস করতে বা জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের কোন নির্দেশ ,উৎসাহ  বা প্রেরণা দেওয়া হয়নি । শুধুমাএ   অল্লাহর মহিমা  বর্ণনা ও শিক্ষা গ্রহণের জন্যই  এসকল ঘটনা  উল্লেখ করা হয়েছে । ঐতিহাসিক তথ্যাদি আলোচনার মাধ্যমে  এর আত্বিক  প্রেরণার  ধারাবাহিকতায় ব্যহত করা হয় নি ।এজন্য আমরা রাসুল (সা) জন্মদিন সম্পর্কে আলোচনায় মূলত :হাদীস শরীফ ও পরবর্তি যুগের মুসলিম  ঐতিহাসিক ও আলেমগণের মতামতের উপর নির্ভর  করবঃ

হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা) ওয়া সাল্লামের জন্মদিন:

হাদীস বলতে আমরা রাসূল (সাঃ) কথা ,কর্ম ,অনুমোদন বা তার সম্পর্কে কোন বর্ণনা বুঝি ।এছাড়ৃাও রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাহাবিগণের কথা ,কর্ম বা অনুমোদনকেও হাদিস বলা হয়ে থাকে। হিজরি দ্বিতিয় ও তৃতীয় শতাব্দিতে প্রায় অর্ধাশতাধিক গ্রন্থে রাসুল (স) এর  হাদিস ও তার সাহাবাগণের মতামত সনদ বা বর্ণনাসূএসহ সংকলিত হয় ।তন্মর্ধে আল‘‘ কুতুবুস সিওাহ’’ নামে প্রসিদ্ধ ৬টি অতি প্রচলিত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল হাদিসগ্রন্থের সংকলিত হাদিস থেকে রাসূল (সা) এর জন্মবার ,জন্মদিন ও জন্মতারিখ সম্বন্ধে প্রাপ্ত তথ্য নিম্নরূপ:

রাসূল (সা) ওয়া সাল্লামের জন্মবার সম্পর্কে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে: আবু কাতাদা আল-আনসারি (রা) বলেন :রাসুলুল্লাহ (সা) সোমবার দিন রোজা  রাখা সম্পর্কে জিঙ্গাসা করা হয়। তিনি বলেন :এই দিনে (সোমবারে ) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি ।

ইবনে আব্বাস বলেন :রাসুলুল্লাহ (সা) সোমবারে জন্মগ্রহন করেন,সোমবারে নবুওয়াত লাভ করেন ,সোমবারে ইন্তেকাল করেন ,সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার পথে রওয়ানা করেন ,সোমবারে মদিনা পৌছান এবং সোমবারেই তিনি হাজওয়ারে আসওয়াদ  উওোলন করেন

এভাবে  আমরা হাদীস শরীফ থেকে রাসুল (সা) জন্ম বার জানতে পারি।সহীহ হাদিসের  আলোকের  প্রায় সকল ঐতিহাসিক একমত যে রাসুল (সা)  সোমবার জন্মবার জন্মগ্রহণ করেন  ।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জন্মবৎসর  বা জন্মের সাল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে ঃ

কায়স ইবনে মাখরামা রাদিয়াল্লাহ  আনহু বলেন : আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা) দুজনেই ‘‘হাতির বছরে ‘’ জন্মগ্রহণ করেছি । উসমান ইবন  আফফান (রা) কুবাস  ইবন  আশইয়ামকে  প্রশ্ন করেন : আপনি বড় না  রাসুল (সা) বড় ? তিনি উওরে বলেন :রাসূল (সা)  আমার থেকে বড় ,আর আমি তার পূর্বে জন্মগ্রহন করেছি । রাসৃুল (সা)‘‘ হাতীর বছরে ‘’ জন্মগ্রহন করেন । হাতীর বছরে জন্মগ্রহন করেন । হাতির বছরে অর্থাৎ যে বৎসরে  আবরাহা হাতী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা আক্রমণ করেছিল ্ ঐতিহাসিকদের মতে এ বছরে ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দ ছিল ।

তিন,জন্মমাস ও জন্ম তারিখ :

এভাবে  আমরা  হাদীসে শরীফের আলোকে রাসুল (সা)  এর জন্ম বৎসর ও জন্ম বার সম্পর্কে জানতে পারি । কিন্তু রাসুলু (সা)  কোন হাদীস তার জন্মমাস ও জন্মতারিখ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না । একারনে পরবর্তি যুগের আলেম ও ঐতিহাসিকগণ তার জন্মতারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন ।

Leave a Comment