এতিম কাকে বলে

এতিমের সম্পদের যথাযথ সংরক্ষন এবং সময়মতো তাদের হাতে সমর্পণের মাধ্যমে তাদের প্রতি সদাচরণের সাথে সাথে  নিজেকে দায়মুক্ত করা এবং মাল  প্রত্যর্পণের  সময় সাক্ষি রাখার  নির্দেশসহ  আল্লাহর পক্ষ থেকে  আলোচ্য আয়াতে কারিমোসমুহের  অবতারণা ।

আর তোমাদের সম্পদ যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজিবীকা করেছেন ,সেগুলো  নির্বোধ  এতিমদেরকে বুঝিয়ে দিও না;বরং সেগুলো (তোমাদের কন্ট্রোলে রেখে তা) হতে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো ,তাদের পোষাক সরবরাহ কর,তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বলো।

*আর তোমরা এতিমদের পরিক্ষা করতে থাক ;যে পর্যন্ত না তারা বিবাহের বয়সে উপনীত হয় । অতঃপর তোমরা যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেক দেখতে পাও  তবে তাদের ধনসম্পদ তাদের হাতে সমর্পণ করো । আর তারা বড় হয়ে নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে নেবে .এ ভয়ে অপব্যয় ও তাড়াহুড়া করে তাদের সম্পদ খেয়ে শেষ করো না । আর যে তত্বাবধায়ক ধনশালী সে যেন এতিমের সম্পদ ভক্ষন করা হতে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকে । আর যে গরিব সে ন্যায়সঙ্গতভাবে ভোগ করতে পারে । তারপর তোমরা যখন এতিমদের ধনসম্পদ তাদের নিকট সমর্থন করবে ,তখন অবশ্যই সাক্ষি রাখবে ।বস্তুত হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে  আল্লাহই যথেষ্ট ।

এতিমদের সম্পদ তাদের হাতে সমর্পন করার শর্তাবলিঃ এতিমদের সম্পদ তাদের হাতে সমর্পন করার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে।যথা-

প্রাপ্তবয়স্ক ঃ

এতিম প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ।সুতরাং অপ্রাপ্তবয়স্ক  এতিমদের হাতে তাদের সম্পদ সমর্পণ করা যাবে না।

বুদ্ধি বিবেকসম্পন্নঃ

এতিম তথা বুদ্ধিবিবেকসম্পন্ন হওয়া অর্থাৎসম্পদ সংরক্ষণ ও পরিচালনার যোগ্যতা থাকা ।

ইমাম শাফেয়ী ,আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ(র) এর মতে এতিমের মধ্যে সম্পদ পরিচালনার যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন ।সে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় কিন্তু সম্পদ পরিচালনার যোগ্যতা না থাকে ,তাহলে কোন অবস্থাতেই তার নিকট সম্পদ সমর্পণ করা যাবে না ।

ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতে যদি এতিমের মধ্যে বুদ্ধি বিবেক না থাকে  তাহলে  অভিভাবক১৫ বছরের পর আরও ১০ বছর  অর্থাৎ মোট ২৫ বছর  অপেক্ষা করবেন । এরপর সম্পদ পরিচালনার যোগ্যতা না আসলেও তাদের সম্পদ তাদের হাতেই প্রত্যার্পণ করতে হবে ।

মাল অপরিবর্তীত অবস্থায় থাকা ঃ                                             এতিমদের মূল সম্পদ তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে ।নিম্নমানের  অথবা অন্য কিছু ‍মিশ্রিত করে বা রদবদল করে তাদেরকে দেয়া যাবে না ।

নির্বোধ অবস্থায় সম্পদ সমর্পণ না করা

এতিমদের বালেগ হওয়ার গ্রহণযোগ্য বয়সসীমা ঃ

সাধারণত বালেগ হওয়ার গ্রহনযোগ্য বয়সসীমা বলতে নির্দিষ্ট কিছু নেই ।বিভিন্ন দেশের জলবায়ুর  তারতম্যের কারণে  এরও তারতম্যে ঘটে থাকে ।তবে বালেগ হওয়ার  কতিপয় নিদর্শন রয়েছে ।যেমন –

পুরুষের ক্ষে ্েএ নিদর্শন হচ্ছে -স্বপ্নদোষ হওয়া, ২ দাড়ি গোফ গজানো ৩. নাভির নিচে লোম গজানো  ইত্যাদি ।

নারীদের ক্ষে েএ নিদর্শন হচ্ছে- ১হায়েয হওয়া ২স্তনের আকার বৃদ্ধি হওয়া ৩ স্বপ্নদোষ হওয়া ৪ নাভির নিচে লোম গজানো ইত্যাদি।

উল্লেখ্য ,বালেগ হওয়ার সুর্নিদিষ্ট কোনো সময়সীমা না থাকলেও বিশেষঙ্গগণের বক্তব্য থেকে কতিপয় বয়সসীমা পরিলক্ষিত হয়।যেমন- ইমাম শাফেয়ী,আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ ও ইমাম  আবু হানিফা (র)এর এক বর্ণনা

মতে বালেগ হওয়ার সময়সীমা ১৫ বছর । ইমাম আবু হ৮ানিফা  (র)এর এক বর্ণনা মতে ছেলেদের বালেগ হওয়ার সময়সীমা ১৮ বছর আর মেয়েদের ১৭ বছর । কারো মতে এ বয়সসীমা ১৬ বছর ।

কানযুদ দাকায়েক প্রণেতা বলেন বালেগ হওয়ার ক্ষে  েএ নির্ভরযোগ্য বয়সসীমা হচ্ছে১৫  বছর ।

এতিমদেরকে পরিক্ষা পদ্ধতিঃ

আর তোমরা এতিমদের বিয়ের বয়স উপনীত হওয়া পর্যন্ত পরিক্ষা  করতে থাক ।আয়াতে  আল্লাহ তায়ালা  এতিমদের পরিক্ষা করার জন্য বলেছেন । এতিমদের পরিক্ষা করার পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে  তাকে  ক্রয়বিক্রয় ও লেনদেনের নিয়ম সম্পর্কে প্রশিক্ষন দিয়ে সামান্য কিছু মাল দিতে হবে যদি এ র ক্রয়বিক্রয় সে লাভবান হয় এবং তার সঠিক ব্যবহার জানে,তাহলে বুঝতে হবে  যে তার ইলমের পরিপক্কতা ও সম্পদ পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন হয়েছে ।অতএব  এ অবস্থায় তার মাল তার হাতে অর্পণ করা  যেতে পারে ।

কিন্তু যদি তার সম্পদ  পরিচালনার ও সংরক্ষণের যোগ্যতা সৃষ্টি না হয়,তাহলে ২৫ বছর পর্যন্ত অভিভাবককে অপেক্ষা করতে হবে । এরপরও তার যোগ্যতা না আসলে তার মাল তার হাতেই সমর্পণ করতে হবে। অবশ্য পাগল হলে ভিন্ন ব্যপার ।

সমাপণি ঃকোনো সম্পদ কখনো  অযোগ্য লোকদের হাতে অর্পণ করা যাবে না । এতিমদের সম্পদের ক্ষে েএও ঠিক একই বিধান প্রযোজ্য। আর এতিমগণ প্রাপ্তবয়স্ক ও যোগ্যতাসম্পন্ন হলে তাদের সম্পদ তাদেরই হাতে প্রত্যর্পন করতে হবে । 

Leave a Comment