কবরের আযাব

কবরের আযাব সম্পর্কে নবি করিম (সা) থেকে  নির্ভরযোগ্য  সূএ পরম্পরায়  অনেক হাদিস  বর্ণিত হয়েছে। যথা ঃহযরত  আব্দুল্লাহ  ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে  বর্ণিত হয়েছে । যথাঃহযরত  আব্দুল্লাহ  ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে  একদা নবি করিম (সাঃ) দুটি কবরের  পাশ দিয়ে  অতিক্রম করছিলেন ।                                 তখন তিনি বললেন  উভয়ের ‍ওপরই শাস্তি হচ্ছে । কিন্তু তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়ের কারনে শাস্তি হচ্ছে না । এদের মধ্যে  একজন পেশাবের  ছিটা থেকে সতর্ক থাকতো না ,অপরজন চোগলখোরি করত ।  অতঃপর তিনি  একটি  তাজা খেজুরের  ডাল ছিড়ে উভয় কবরের  ওপর পুতে দিলে  দিলে  এবং বললেন  হয়তো  এগুলো শুকানো পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা  এদের শাস্তি লাঘব করবেন । (বুখারি ও মুসলিম)                                                                                      যায়েদ  ইবনে সাবেত (রা)  থেকে বর্ণিত  আছে  ঃ একদা  নবী করিম (সা)বনু নাজ্জারের বাগানে তার খচ্চরের ওপর সওয়ার  ছিলেন  আমরাও তার  সাথে ছিলাম । হঠাৎ খচ্চর  এমনভাবে  লাফাতে লাগলো যেন হুযুর (সা) কে পিঠের ওপর থেকে ফেলে দিবে ।ইত্যবসরে  আমরা চার ,পাঁচ অথবা ছটি কবর দেখতে পেলাম। হুযুর (স) জিঙ্গেস করলেন  এরা কখন মারা গেছে ? সে বলল তারা শিরকের অবস্থায় মারা গেছে ?  অতঃপর হুযুর বললেন  আমার উম্মত কবরে  পরীক্ষার সম্মুক্ষিন হয় । যদি আমার এ ভয় না হত যে ,তোমরা দাফন কার্য ছেড়ে দিবে ,তাহলে  আমি  আল্লাহ তাআলার কাছে  দোআ করতাম । তোমরাও যেন আমার মতো কবরের আযাব শুনতে পাও ।                                                                                    অতঃপর তিনি আমাদের নিকট মনোনিবেশ করে বললেন  জাহান্নাম থেকে আল্লাহর তায়ালার কাছে পানাহ চাও ।                সাহাবায়ে কেরাম বললেন আমরা  আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাই । হুযুর (স) ইরশাদ করলেন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে  ফিতনা থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাও । সাহাবায়ে কেরাম বললেন আমরা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাই।                     অতঃপর বললেন দাজ্জালের ফিথনা থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট পানাহ চাও । তখন সাহাবায়ে কিরাম বললেন  আমরা দাজ্জালের ফিতনা  থেকে  আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাই ।

সহিহ মুসলিম শরিফে  এবং হাদিসের  অপরাপর গ্রন্থাবলিতে আবু হুরাইরা (রা) তেকে বর্ণিত হয়েছে  ,হুযুর (সা) এরশাদ করেছেন ,নামাযের শেষ তাশাহুদ  পড়ে শেষ করার পর চারটি জিনিষ থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাওয়া উচিত । জাহান্নামের আজাব থেকে ,কবরের আজাব থেকে , এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে ।                                                                                                     হযরত  ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন ঃরহমতে আলম (সা) কোরআন  শিক্ষা দেয়ার ন্যায়  তাদের এ দোআ  শিক্ষা  দিতেন ঃ       হে আল্লাহ  আমি  আপনার কাছে  জাহান্নামের  আযাব থেকে  পানাহ চাই এবং মসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে  পানাহ চাই,কবরের আযাব থেকে  আপনার কাছে পানাহ চাই।

একদা সূর্যাস্তের পর নবি করিম (স) বাইরে তাশরিফ নিয়ে গেলেন । তিনি একটি শব্দে শুনে বললেন ,ইহুদিদের কবরে আযাব হচ্ছে। (বুখারি ও মুসলিম)

জীব জন্তুরা কবরের আযাব শুনতে পাই কিনা ঃহযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত  আছে ঃ তিনি বলেন মদিনার এক বৃদ্ধা ইহুদি আমাকে কবরের আযাব সম্পর্কে বললে ,আমি তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করি । কারণ তার কথা আমার বিশ্বাস হয়নি । অবশেষে  সে চলে গেল ।ইত্যবসরে  হুযুরের (সা)  তাশরীফ আনলেন  ।আমি কবরের আযাব সম্পর্কে জিঙ্গেস করলাম । তিনি এরশাদ করলেন কবরের আযাব সত্য । (মানুষ ছাড়া সকল প্রানি উহা শুনতে পায় । আয়েশা (রা) বললেন  এর পর থেকে  প্রতি নামাযের  পর আমি তাকে কবরের  আযাব থেকে পানাহ চাইতে দেখেছি।  উম্মে বিশর  (রা)  বলেন  নবি করিম(স)  এ বলে  আমার নিকট  তাশরীফ  আনলেন ,কবরের আযাব থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট পানাহ চাও । আমি জিঙ্গেস করলাম ,হে আল্লাহর রাসুল কবরেও কি আযাব হয় ? তিনি বললেন হ্যাঁ  প্রাণিকুল তা শুনতে পায় ।      কবরের আযাব প্রাণিদের পেটের ব্যথা  উপশম করে                             কোন কোন আলেমের মতে  এ জন্যই যখন প্রাণিদের  পেটে  ব্যথা হয় তখন লোকেরা  তাদের প্রাণীগুলোকে ইহুদি ,খ্রীষ্টান  এবং মুনাফিক যথা মিসর ও সিরিয়ায়  বসবাসকারী  ইসমাঈলীয়া ,নাসীরীয়া ও কারামিতা প্রভৃতি  সম্প্রদায়ের  লোকদের কবরের  কাছে  নিয়ে যায় । যখন  এসব  প্রাণি বিশেষ করে ঘোড়া কবরের আযাব শুনে ভীত -বিহ্বল হয়ে পড়ে  এবং লাফাতে শুরু করে ,তখন তাদের পেটের ব্যাথা দুর হয়ে যায়।

কবরের আযাব বলতে কি বুঝায় ঃ

একটি কথা মনে রাখতে হবে যে ,কবরের আযাব বলতে বরযখের  অর্থাৎ মৃত্যুর পর  হতে পুনরুথান পর্যন্ত  অন্তর্বর্তী সময়ের আযাবকে বুঝায় । শাস্তির  উপযোগি প্রত্যেক  ব্যক্তিকে তাদের অপরাধ অনুসারে অবশ্যই আযাব  ভোগ করতে হবে ।  তাকে দাফন করা হোক বা না হোক । যেমন কোন হিংস্র প্রাণী  কাউকে খেয়ে ফেলল .অথবা সে আগুনে  পুড়ে  ছাই হয়ে গেল আর এ ছাই বাতাসে উড়ে গেল অথবা ফাসি কাষ্ঠে ঝুলন্ত রইল  কিংবা  সমুদ্রে ডুবে গেল ,তবু সে নিস্কৃতি পাবে না । কারণ প্রকৃত কবর তো বরযখ । আর বরযখে অথবা  শান্তি বর্ষিত হতে থাকে ।

আহমদ ইবনে কাসিম (রহ) বলেন আমি  আবু আব্দুল্লাহকে  জিঙ্গেস করেছি  আপনি কি  মুনকার -নকির  এবং কবরের  আযাব মানেন ? তিনি বললেন  সুবহানআল্লাহ ! হ্যা আমি তা স্বিকার করি  এবং  এর  ওপর  দৃঢ় বিশ্বাস  রাখি । আমি আবার জিঙ্গেস করলাম  আপনি কবরে প্রশ্নকারী  ফেরেশতাকে  মুনকার -নকির বলেন ? না শুধু ফেরেশতা বলেন ? তিনি জবাব  দিলেন মুনকার -নকির  । আমি বললাম হাদিসে তো মুনকার -নকির শব্দ নেই। তিনি বললেন  হাদিসে  মুনকার নাকির শব্দ রয়েছে।

Leave a Comment