কুরবানির আধুনিক মাসআলা

একজন ব্যক্তির পক্ষ হতে একটি বকরি কুরবানি করা আবশ্যক।একটি গরু বা একটি উট  এক হতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত কুরবানি দিতে পারবে । তবে শর্ত হলো কোনো ব্যক্তির এক সপ্তমাংশ হতে কম হতে পারবে না । (অর্থাৎ সকলের ভাগ সমান হতে হবে )সাত জনের মধ্য হতে কোনো একজনের  এক -সপ্তমাংশ হতে কম হলে কারো কুরবানি জায়েজ হবে না।                                                                               কেননা কুরবানির গুণগত বৈশিষ্ট্যকে খন্ডিত করা যায় না । ইমাম মালেক (র) এর মতে একটি গরু অথবা উট এক পরিবারের কুরবানির জন্য যথেষ্ট ;চাই সে পরিবারের লোক সংখ্যা সাতের অধিকই হোক না কেন। তবে দু পরিবারের পক্ষ হতে  একটি গরু বা একটি উট কুরবানি দেওয়া জায়েজ হবে না ,যদিও উভয় পরিবার মিলে লোকসংখ্যা সাতজনের চেয়ে কমই হোক না কেন । ওজন করে গোশত বন্টন করবে ,অনুমান করে গোশত বন্টণ করবে না । তবে যখন গোশতের সাথে পশুর পায়া বা চামড়া মিশ্রিত করা হয়,

(তাহলে অনুমানের মাধ্যমে বন্টনে কিছু হেরফের হলে  দোষ নেই)। অর্থাৎ গোশতের সাথে  পায়া অথবা চামড়া থাকলে ।এভাবে যে,প্রত্যেক অংশেই কিছূ গোশত ও চামড়ার  অংশ বিশেষ থাকবে । কিংবা  এক ভাগে গোশত ও পায়া এবং অপর ভাগে  গোশত  ও চামড়া থাকবে ।ভিন্ন জাতীয়ের সাথে বিনিময় হওয়ার দরুন (উপরিউক্ত অবস্থায় অনুমানভিওিক  বন্টণ)জায়েজ হবে ।                                                                                                                            (এক ব্যক্তি কর্তৃক) কুরবানির  উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত গরুর মধ্যে (আরো) ছয় ব্যক্তির  অংশগ্রহণ জায়েজ হবে।

এই  বৈধতা  ইস্তেহাসান (কল্যাণ কামনা )এর দৃষ্টিতে হবে।কিয়াসের  দৃষ্টিতে তা বৈধ হয় না । আর তা ইমাম যুফারেরও অভিমত ।কেননা,প্রথমোক্ত ব্যক্তি একে  ‘কুরবাত’ (নৈকট্য হাসিল)-এর উদ্দেশ্য প্রস্তুত করেছে । তাই এর  বিক্রি জায়েজ হবে না ।ইস্তেহসানের দিকটি হলো ,কোন ব্যক্তি মোটাতাজা গরু পায় , অথচ ক্রয়ের সময়  (ইচ্ছা করলেও) অংশীদার পাওয়া  যায় না । (তাই বাধ্য হয়ে  একাকি ক্রয় করে ) বুঝা গেল (তার ) অংশীদার সংগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে ।তবে পশু ক্রয়ের পূর্বে ই অংশিদার  সংগ্রহের  প্রয়োজন রয়েছে । তবে পশু ক্রয়ের পূর্বেই অংশীদার হওয়া শ্রেয়।                                                                                                                          ইমাম আবু হানিফা (র)  এর মতে ক্রয়ের পর অ ংশিদার হওয়া মাকরুহ ।যার ওপর ফিতরা ওয়াজিব  কেবল তার উপরই কুরবানি ওয়াজিব হবে । ফেতরার বর্ণনা প্রসঙ্গে পূর্বেই এর উপর আলোকপাত করা হয়েছে । কুরবানি ওয়াজিব  হওয়ার  ব্যপারে  রাসুলে করিমের নিম্নোক্ত বাণি  প্রণিধানযোগ্য – ক্ষমতাবান হওয়া সত্বেও যে কুরবানি করবে না ,সে যেন আমাদের  ঈদগাহের  নিকটও  না আসে । ইমাম শাফেঈ (রা) মতে  এটা সুন্নত । জাহের  রিওয়ায়াত  (প্রকাশ্য বর্ণ না )অনুসারে  কেবল নিজের পক্ষ হতে কুরবানি করা ওয়াজিব,শিশৃুদের পক্ষ  হতে কুরবানি করা ওয়াজিব নয় । হাসানের বর্ণনা অনুযায়ি  আবু হানিফা (র)   এর মতে  ফিতরার ন্যায়  শিশুর পক্ষ  হতে কুরবানি করা  ওয়াজিব হবে । আমাদের কথা হলো  সন্তানের পক্ষ  হতে ফিতরা  দান ওয়াজিব  হওয়ার কারন  অভিভাকত্ব । আর অভিভাবকই  সন্তানের প্রতিপালন ও ব্যায় ভার বহন করেন । (পক্ষান্তরে কুরবানি কেবল  আল্লাহর সন্তোষ  হাসিলার্থে  হয়ে থাকে । আর  এ   ধরনের ইবাদত একজনের  পক্ষ হতে  আরেকজনের  দায়িত্ব বর্তায় না । )                                                                                                                                       হ্যাঁ (শিশু সন্তান সম্পদশালী হলে ) তার পিতা বা (আইনত )অভিভাবক তার সম্পদ দ্বারা  তার পক্ষ হতে কুরবানি দেবে ।                                                                                                                                                                        এটা ইমাম আবু হানিফা  ও ইমাম আবু ইউসুফ  (র) এর  অভিমত ।পক্ষান্তরে  ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম শাফেয়ী (র) এর অভিমত  হলো ,তার পিতা বা অভিভাবক  স্বীয় মাল  দ্বারা শিশু সন্তানের  পক্ষে কুরবানি  করবে -শিশূ সন্তানের  মাল দিয়ে নয়।                                                                                                                                                        শিশূ তার কুরবানিকৃত পশুর গোশত  হতে (যতটুকু সম্ভব )খাবে  আর অবশিষ্ট  গোশতের বিনিময়ে এমন  বস্তু গ্রহন করবে  যা নিঃশেষ  হওয়া  ব্যতিরেকেই উপকারে  আসে । যেমন -কাপড়,মোজা ইত্যাদি। এমন বস্তু নয়  যা বিলুপ্তির  মাধ্যমে  উপকারে  আসে । যেমন -রুটি ইত্যাদি । প্রথমোক্তের  বিনিময়ে  বৈধ না হওয়া  চামড়ার  উপর  অনুমান করে  সাব্যস্ত  করা  হয়েছে ।   কেননা চামড়ার দ্বারা  উপকৃত হওয়া জায়েজ  আছে। যেমন- কাপড়,মোজা  ইত্যাদি । এমন  বস্তু নয়  যা বিলুপ্তির মাধ্যমে  উপকারে  আসে ।যেমন -রুটি  ইত্যাদি । প্রথমোক্তের বিনিময়ে বৈধ  হওয়া এবং শেষোক্তের বিনিময়ে  ৈবধ না হওয়া চামড়ার  উপর  অনুমান করে সাব্যস্ত  করা  হয়েছে । কেননা,চামড়ার দ্বারা  উপকৃত  হওয়া জায়েজ  আছে । যেমন -কলসি  (মটকা) বানানো যায়। আর  যখন  এর বিনিময়ে  এমন বস্তু গ্রহণ করা  হলো যা হুবহু  ব্যবহারযোগ্য,তখন বিনিময়ে গৃহিত বস্তর  হুকুমে  ব্যবহারযোগ্য,তখন  বিনিময়ে গৃহিত  বস্তর  হুকুমে  পরিবর্তন সাধিত হলো ।আর  তা যেন  হুবহু ঐ গোশতের  দ্বারাই উপকৃত হওয়া।  আর এর বিনিময়ে  মুদ্রা গ্রহণ  পুঁজি বানানোর  নামান্তর ।  আর যার দ্বারা  উপকৃত হলে  তা নিঃশেষ  হয়ে যায়  তা মুদ্রার হুকুমের  অর্ন্তভূক্ত  হবে । চামড়ার  বেলায় যেহেতু উক্ত হুকুমে প্রযোজ্য, সেহেতু প্রয়োজনের তাগিদে ফিকহবিদগণ  শিশুর জন্য গোশতের বেলায়ও  উপরোক্ত সিদ্ধান্তকে  কিয়াসের  দ্বারা প্রয়োগ করেছেন।                                                                                                                                       আর এটার  (কুরবানির পশু জবাই করার ) প্রথম  সময়  হলো  ঈদের নামাযের পর  যদি শহরে জবাই করা  হয় ,অর্থাৎ কুরবানির দিবসে  ঈদের নামায আদায়ের পর । আর ঈদের দিনের  ফজর উদিত  হওয়ার পর  এটার  প্রথম সময় হবে ,যদি  শহর ছাড়া  অন্যএ  জবাই করা হয় । আর তৃতিয়  দিবসের  সৃর্যাস্তের  পূর্ব মুহুর্ত  এটার শেষ সময় । এক্ষে েএ যে স্থানে কুরবানি করা হবে  তার অবস্থান বিচার করা হবে ,যার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে  তার অবস্থান ধর্তব্য হবে না । তবে মুসাফিরের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব হবে না । হেদায়া গ্রন্থে অনুরুপ উল্লেখ রয়েছে ।  ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (রা) এর  মতে  ঈদের নামাযের পর  ও ইমামের জবাইয়ের পূর্বে  অন্যদের  জবাই করা জায়েজ হবে না ।ইমাম শাফেয়ী (র) এর মতে  চারদিন  পর্যন্ত কুরবানি করা  জায়েজ হবে ।দরিদ্রতা ও স্বচ্ছলতা  এবং  জন্ম -মৃত্যুর (বিচারের)জন্য শেষ দিবস  ধর্তব্য হবে । অর্থাৎ প্রথম  দিবসগুলোতে ধনী আর শেষ দিন দরিদ্র হলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না । আর  এর বিপরিতে (অর্থাৎ প্রথম দিনগুলোতে  দরিদ্র  এবং  শেষ দিন ধনী  হলে )কুরবানি ওয়াজিব  হবে ।পক্ষান্তরে  শেষ দিন  কেউ মৃত্যুবরণ করলে  তার উপর ওয়াজিব হবে না । রা েএ  জবাই করা মাকরুহ । যদি পরিত্যাগ করে  অর্থাৎ কুরবানি করা পরিহার করে আর কুরবানির দিনগুলো  অতিবাহিত হয়ে যায়,তাহলে মানতকারি (অর্থাৎ যে নির্দি ষ্ট  জন্তু দ্বারা  কুরবানি দেওয়ার মানত করেছে ) এবং সে দরিদ্র ব্যক্তি যে তাকে কুরবানি করার জন্য খরিদ  করেছে  উভয়ে উক্ত পশুকে  জীবিত সদকা করে দেবে। 

আর স্বচ্ছল ব্যক্তি কুরবানির  প্রাণির মুল্য সদকা করে দেবে ,সে প্রাণি খরিদ করুক বা না করুক । অর্থাৎ কেউ যদি এ বকরি দিবে  নিয়ত  করে ,তখন  তার কুরবানি  পা েএর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। (নির্ধারিত সময় কুরবানি আদায় না করলে ,পরবর্তিতে তা সদকা করে দিতে হবে ।) আর দরিদ্রের  উপর  কেবল কুরবানির নিয়তে ক্রয়ের দ্বারা কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে ,অথচ  সম্পদশালির ব্যাপারে আলাদা , সে বকরি খরিদ করুক  আর না করুক সর্বাবস্থায় ওয়াজিব তার দায়িত্বের  সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে ।

1 thought on “কুরবানির আধুনিক মাসআলা”

Leave a Comment