কুরবানির আধুনিক মাসয়ালা ২

আর ছয় মাসের  মোটাতাজা দুম্বা  যা দেখতে এক বছরের  মনে হয় ,তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ।তা বলে ছয় মাসের দুম্বা শাবককে। আর মোটাতাজা হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা।আর  িএবিদ পশুর (অর্থাৎ বকরি ,গরু উটের)সানী বা তদুর্ধ্ব বয়স্ক পশুর দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ অর্থাৎ বকরি যা ব্যপকার্থে দুম্বা ছাগল  উভয়কে অর্ন্তভূক্ত করবে এবং গরু উট ।আর পাঁচ বৎসরের উট দুবছরের গরু এক বছরের বকরিকে সানী বলে ।কারো কারো মতে এক বৎসর দু বৎসর  পাঁচ বৎসরের উটকে সানায়া বলে ,যার খুর জুলফি রয়েছে। যেমনশিংবিহিন পশু বলদ (খাসি) এবং পাগলা পশু।(অর্থাৎ এদের দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে ) তবে অন্ধ,কানা ,অতি দূর্বল ,লেংড়া যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত যেতে সক্ষম নয় এদের দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না ।জামাআ বলে শিংবিহিন পশুকে ।আরবিতে সাওলা বলে  যে পশুর মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গেছে।আরবিতে আওরা হলো  এক চক্ষূবিশিষ্ট পশু।অর্থাৎ যার দূর্বলতা এমন সীমায় পৌছে গেছে  যে তার হাড়ে মজ্জা শুষ্ক  হয়ে গেছে আর যে পশূর হস্ত বা পা কর্তন করা হয়েছে অথবা যে পশুর কান ,লেজ,চক্ষূ কিংবা নিতম্বের  একতৃতীয়াংশের  অধিক বিলোপ  পেয়েছে  এদের দ্বারাও কুরবানি বৈধ হবে না ,এটি জামে সগীরের বর্ণনা।

কারো কারো মতে ,কুরবানির  পশুর আগের  একতৃতীয়াংশ বাকি  থাকলেও কুরবানি জায়েজ হবে আবার অন্য এক দলের মতে একচতুর্থাংশ থাকলেই কুরবানি জায়েজ হবে ।আর সাহেবাইন অর্থাৎ আবু  ইউসুফ মুহাম্মদ () এর মতে অর্ধেকের অধিক অংশ অবশিষ্ট থাকলে কুরবানি জায়েজ হবে ।চক্ষূর দৃষ্টিশক্তির এক তৃতীয়াংশ বিলুপ্ত হওয়া নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে জানা যাবে ।পশুটির স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন চক্ষুটি প্রথমে বাধবে তারপর তার নিকটবর্তি স্থানে ঘাস রাখবে যখন পশূটি ক্ষুধার্ত থাকবে। এখন দেখতে হবে কতদুর হতে ঘাস দেখতে পাচ্ছে অতঃপর  তার ভালো চক্ষু বেধে দেবে এবং তার নিকটে ঘাস রাখবে ।তারপর দেখবে এবার তা কতদুর হতে ঘাস দেখতে পায়।এরপর প্রথম দ্বীতিয় স্থানের পার্থ্যক্য (দুরত্ব)যদি একতৃতীয়াংশ লোপ পেয়েছে। পদ্ধতিতে কমবেশি  নির্ধারণ করবে (সাত অংশীদার মিলে কুরবানির পশু ক্রয় করার পর)                 যদি সাত অংশীদারের একজন  মৃত্যুবরণ করে  এবং তার ওয়ারিশগণ বলে যে ,তোমরা একে তোমাদের  এবং তার পক্ষ হতে জবাই করে দাও,তাহলে জায়েজ হবে। ইমাম  আবু ইউসুফ (র) এর মতে,জায়েজ হবে না ।আর কিয়াসের দাবিও এটাই।কেননা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে দান প্রদান করা ।আর এরুপ অনুদান অন্যের পক্ষ হতে বৈধ নয়।যেমন মৃতব্যক্তির পক্ষ হতে দান করা ।ইস্তেহসানের যুক্তি হল কুরবাত’(ইবাদত)তো মৃতের পক্ষে সংঘটিত হয়েছে,যেমনটি সদকার ক্ষে েএ হয়ে থাকে ।এটা মুক্ত করার বিপরিত ।কেননা এতে ওয়ালা এর দায়িত্ব মৃত ব্যক্তির ঘাড়ে চাপানো হয়ে থাকে ।যেমন -একটি গরু দ্বারা একজনের কুরবানি ,একজনের মুতআ ও একজনের কেরান  হজ্বের দম দেওয়া জায়েজ হবে।তবে অংশিদারদের একজন কাফির হলে  অথবা গোশত খাওয়ার ইচ্ছা পোষনকারী হলে  আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য  না হলে কুরবানি জায়েজ হবে না । কেননা এ পশুর কিছু অংশ আল্লাহর  সন্তুষ্টির  উদ্দেশ্যহীন আর কুরবাত খন্ডিত হতে পারে না।

আর কুরবানির পশুর গোশত নিজেও খেতে পারবে এবং অন্যদেরকেও খাওয়াতে পারবে .আর যাকে ইচ্ছা দান করতে পারবে। এর (গোশতের )এক -তৃতীয়াংশ সদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব।আর যার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি তাদের পরিতুষ্টির খাতিরে তার জন্য সদকা না করাই ভালো । আর উওম ভাবে জবাই করতে পারলে স্বহস্তেই জবাই করবে নতুবা  অন্যকে জবাইয়ের হুকুম করবে ।আহলে কিতাবের দ্বারা জবাই করানো মাকরুহ হবে ।কুরবানি পশুর চামড়া সদকা করে দেবে  অথবা তার দ্বারা ব্যবহার্য জিনিসপএ তৈরী করবে।যেমন থলি ,মোজা ,মশক ইত্যাদি। আর তার বিনিময়ে এমন বস্তু গ্রহণকরা যাবে যা নিঃশেষ না হয়ে উপকারে আসে ,এমন বস্তু নেওয়া যাবে না যা নিঃশেষ না হয়ে উপকারে আসে,এমন বস্তু নেওয়া যাবে না যা নিঃশেষ হয়ে উপকারে আসে ।যেমন সিরকা ও এ জাতীয় বস্তু ইত্যাদি।আর যা ধ্বংস হয়ে উপকারে আসে ,তার বিনিময়ে (অথবা মুদ্রার বিনিময়ে )কুরবানির চামড়া বিক্রি করলে তার মুল্য সদকা করে দিতে হবে।যদি ভুলক্রমে (দু ব্যক্তির)প্রত্যেকেই অপরের বকরি জবাই করে ফেলে,তাহলে উভয়ের কুরবানি সহিহ হবে কোনো ক্ষতিপুরণ দিতে হবে না । এটা কিয়াস অনুযায়ি সহিহ হয় না :বরং ক্ষতিপুরণ দিতে হবে ।কেননা প্রত্যেকেই একে অপরের  অনুমতি ছাড়া তার বকরি জবাই করেছে ।আর এক্ষে েএ ইস্তেহাসানের যুক্তি হলো বকরিটিকে কুরবানির উদ্দেশ্য নির্বাচিত করা হয়েছে .আর পরোক্ষভাবে  অনুমতিও রয়েছে ।কেননা জবাইয়ের ব্যাপারে  অপরের সাহায্য নেওয়ার রীতি চালু রয়েছে।

আর তাই ছিনতাইকৃত বকরির দ্বারা কুরবানি দিলে জায়েজ হবে .গচ্ছিত বকরি দ্বারা কুরবানি দিলে জায়েজ হবে না ।তবে বকরির ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে ।কেননা ছিনতাইয়ের ক্ষে েএ ছিনতাইয়ের সময়েই ছিনতাইকারির মালিকানা সাব্যস্ত হয়ে যায় । আর গচ্ছিত বকরির বেলায় জবাই করার দ্বারা  ছিনতাইকারি  সাব্যস্ত হয়।তাই জবাই মালিকানাবিহিন অবস্থায় সংঘটিত হয়ে থাকে ।জবাইয়ের আনুষঙ্গিক তৎপরতার দ্বারাই সে ছিনতাইকারি সাব্যস্ত হবে ।যেমন-পশুকে শোয়ানো ও তার পা বেধে ফেলা ।সুতরাং জবাইয়ের পুর্বেই সে ছিনতাইকারি সাব্যস্ত হবে। (তাই তার কুরবানি সহিহ হবে)।

কুরবানির গোশতের হুকুম সম্পর্কে বেকায়া গ্রন্থপ্রণেতা বলেন-

১.কুরবানির গোশত কুরবানিদাতা নিজে খাবে  এবং অন্যদেরকেও খাওয়াতে পারবে ।

২।ইচ্ছানুযায়ি আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদেরকে দান করতে পারবে ।

৩।ইচ্ছা করলে সব গোশতেই দান করে দিতে পারবে।

৪।একতৃতীয়াংশ গরিবদের মাঝে সদকা করে দেওয়া মুস্তহাব।

৫।পরিবারের সদস্য বেশি হলে দান না করাও মন্দ নয় ।

৬।কুরবানির গোশত বিক্রয় করা বিধিসম্মত নয় ।

 

1 thought on “কুরবানির আধুনিক মাসয়ালা ২”

Leave a Comment