নামায মূলত একটি ইবাদত ,যার ব্যক্তি জীবনের ন্যায় সামাজিক জীবনেও প্রভাব রয়েছে ।কুরআনে আল্লাহ পাক নামায কায়েম করার কথা বলেছেন।তাই নামায যেনো সামাজিকভাবে,সমষ্টিগতভাবে ও রাষ্ট্রিয়ভাবে কায়েম হয়,সে ব্যপারে আমাদেরকে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।বস্তুত যে দেশে শতকরা ৭৫ ভাগের বেশি লোক ,বিশেষ করে যুবক সম্প্রদায় নিয়মিত নামায পড়েন ও রোযা রাখেন ,সে দেশ সত্যিকার অর্থেই একটি সুখি দেশ এবং মনের দিক থেকে একটি ঐশ্বর্যশালী দেশ।কারণ নামায মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকে ।নামায বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেয়। জামায়াতে নামাযের দৃ্শ্য সত্যি বিস্ময়কর। গরীব-ধনী,রাজা-প্রজা,উজির-নাজির ,শ্রমিক-মালিক,সাদা-কালো সব এক কাতারে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করে থাকে ।কোনো ভেদাভেদ নেই।
বস্তুত নামাজই হচ্ছে সমাজ গঠনের হাতিয়ার।একজন মুসলমান যদি নামাযের হাকিকতগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়, যদি নামাযের মর্মবাণি হ্দয়ে ধারণ করতে সফলকাম হয় এবং নামাজসমুহকে নিছক প্রানহীন দৈনন্দিন আনুষ্ঠানীকতার মধ্যে সফলকাম হয় এবং নামাযসমুহকে নিছক প্রাণহীন দৈনন্দিন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখে,তাহলে সে নামাজ নামাজীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিবে। তখন নামাজই নিয়নএন করবে তার সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের কাজ এবং প্রতিটি পদক্ষেপ ।নামাজের বাইরের সমস্যা জর্জরিত ও কোলাহলপূর্ণ জীবনেও সে নিজেকে নামাজের রঙে রাঙিয়ে তুলতে সক্ষম হবে ।তাই সত্যিকার নামাজির দলই ঘুণেধরা সমাজকে বদলে দিতে সক্ষম।খোদাহীনতার সয়লাব থেকে রক্ষা করে , গোলামির শৃঙ্খল হতে মানুষকে মুক্ত করে বহু ঈশ্বরবাদের ধ্যান -ধারণাকে পদদলিত করে, পরিপুর্ণভাবে এক আল্লাহর দাস েত্ব নিয়োজিত করে এই নামাজ ।তাই সত্য ,সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও খোদাভীরু সমাজ গঠনই নামাজের অন্যতম লক্ষ্য।

এ আয়াতের প্রথমাংশে কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছে। কারণ এ দুটি জিনিসই মুমিনকে সুগঠিত চরিএ ও উন্নততর যোগ্যতার অধিকারী করে তোলে।নিয়মিত অর্থসহ কুরআন অধ্যয়ন ও নামাজের মাধ্যমে মানুষ যে নৈতিক শক্তি অর্জন করে ও বিদ্যাচর্চার বিকাশ ঘটায়,তা অন্য কোনভাবে সম্ভব নয়। আয়াতের দ্বীতিয় অংশে অশ্লীল তথা যাবতীয় পাপ,অপকর্ম,বেহায়াপনা,নগ্নতা, লজ্জাহীনতা,পঙ্কিলতা,যিনা-ব্যভিচার ও অন্যান্য খারাপ কাজকে বুঝানো হয়েছে।অশ্লীল ও অসৎ কাজ বলতে সেইসব দুষ্কর্মকে বুঝায় যা সকল সময় সকল জাতি ও সমাজের লোকেরা খারাপ মনে করে আসছে এবং যা মানুষের প্রকৃতিও খারাপ বলে জানে। নামাজ তার সংরক্ষনকারীদের মধ্যে তাকওয়া (আল্লাহ-ভীতি ও আল্লাহ-প্রীতি )সৃষ্টি করবে। ফলে সে মন্দ কাজ ও আচরণ থেকে বিরত থাকবে।পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ,এক জুমুআর নামাজ থেকে অন্য জুমুআর নামাজ এবং এক রমযানের রোযা থেকে অপর রমযানের রোযা কাফফারা হয় সেসব গুনাহের জন্য যা এদের মধ্যবর্তি সময়ে হয়ে থাকে -যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।(সহিহ মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে নামাজ ও রোযা মানুষের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয় কিন্তু গুনাহ মাছ হয় না। তবে তওবার শর্ত পূরণার্থে ঐকান্তিকভাবে তওবা করলে কবীরা গুনাহ মাফ হয়। তাই কেউ নামাজ নিয়মিত আদায় করবেননা অথচ পরকালে কল্যাণ লাভের আশা করবেন বা বেহেশতে যাবার ইচ্ছা পোষণ করবেন ,এটা অলীক চিন্তা বৈ কিছুই নয়। বস্তুত নামাজের কোনো কাফফারা নেই ।নামাজের কাফফারা হচ্ছে নামাজ।তাই আপনার উপর জানাযার নামায পড়ার আগেই আপনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতে শুরু করুন।যদি পুর্বের জীবনের নামাজ ছুটে যেয়ে থাকে তাহলে সে নামাজগুলো দ্রুত কাযা আদায় করে ফেলুন।এটা আপনার জন্য অতীব কল্যাণকর ।বেনামাজী ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত হতে পারেনা। নামাজের মধ্যে রয়েছে রুযীর প্রশস্ততাঃ একজন সত্যিকার নামাজী ব্যক্তিকে কখনো তার রুযীর জন্য পেরেশান হতে হয় না। কেননা আল্লাহই তার রুযী-রোযগারের ব্যবস্থা করে থাকেন। তোমার পরিবার পরিজনকে নামাজ পড়ার হুকুম দাও এবং নিজেও তা পালন করতে থাকো(তাতে অবিচলিত থাকো) আমি তোমার কাছে রিযিক চাইনা,রিযিক তো আমিই তোমাকে দিচ্ছি এবং শুভ পরিণাম তো আল্লাহ ভীরুদের জন্য। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,যদি কেউ নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ,তাহলে এমনভাবে তার রিযিক আসবে যা সে কল্পনাও করতে পারবেনা । বস্তুত হালাল রিযিক উপার্জন অন্যতম যিকির ।এ সম্পর্কে বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে মুসলমানদেরকে । নামাজের সংরক্ষণ ও রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে নামাজ প্রতিষ্ঠা করা ঃ প্রিয় দ্বীনি ভাইসব,নামাজ হিফাযত ও সংরক্ষণকারীর জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন । নবি করীম (সাঃ) বলেছেন আল্লাহ তার বান্দার উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন । যে তা হেফাযত করলো ,তার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি আরো বলেন ,যে ব্যক্তি নামাজের হিফাযত করল,নামাজ তার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।(আবু দাউদ,নাসাঈ,তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ) তিনি আরো বলেন,যে ব্যক্তি নামাজের হিফাযত করল,নামাজ তার জন্য জ্যেতি ও দলিল হবে এবং কিয়ামতের দিন তার মুক্তির কারণ হবে।(মুসনাদে আহমদ) বস্তুত নামাজ বান্দার জন্য ইহকাল ও পরকালের হিফাজত নিশ্চিত করে ।তাই যে ব্যক্তি সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করল না ,সে নামাজের হিফাযতও করল না। আমরা পৃথিবিতে এদেরকে কর্তৃত্ব বা রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলে তারা অবশ্যই নামাজ কায়েম করবে ,যাকাত দিবে,ভাল কাজের আদেশ দিবে, ভাল কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে । আল হাজ্জ(২২:৪৪) এ আয়াত থেকে জানা যায় একজন মুসলিম ব্যক্তির যেমন প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব হলো নামাজ কায়েম করা ,ঠিক তেমনি গোটা মুসলিম সমাজের তথা ইসলামি রাষ্ট্রেরও সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সমগ্র রাষ্ট্রে নামাজ কায়েম ও তা আদায়ের সুষ্ঠ ু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যে লোক নামাজ পড়েনা ,সে যেমন দ্বীন ইসলাম পালন করেনা ,তেমনি যে রাষ্ট্র বা সরকার নামাজ কায়েমের ব্যবস্থা করেনা, সেটা ইসলামি রাষ্ট্র বা ইসলামি সরকার নামে অভিহিত হবার যোগ্য নয় । এ ব্যাপারে হযরত উমর (রা) এর একটি ফরমান প্রণিধানযোগ্য।
একজন মুসলিম ব্যক্তির যেমন প্রথম ওসর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সমগ্র রাষ্ট্রে নামাজ কায়েম ও তা আদায়ের সুষ্ঠ ু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা । যে লোক নামায পড়েনা, সে যেমন দ্বীন ইসলাম পালন করেনা,তেমনি যে রাষ্ট্র বা সরকার নামায কায়েমের ব্যবস্থা করেনা,সেটা ইসলামি রাষ্ট্র বা ইসলামি সরকার নামে অভিহিত হবার যোগ্য নয়। এ ব্যাপারে হযরত উমর (রা) এর একটি ফরমান প্রণিধানযোগ্য।একবার হযরত উমর ইবনুল খাওাব (রা) তার খিলাফতের সময় তার প্রশাসকদের নিকট এ মর্মে পএ প্রেরণ করলেন,আমার মতে তোমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হিফাজত করলো এবং যথাসময়ে নামাজ আদায় করলো ,সে দ্বিনের হিফাযত করলো । আর যে ব্যক্তি তা বরবাদ করলো , সে নামাজ ছাড়া অন্য আমলকেও চরমভাবে বরবাদ করলো ,সে নামাজ ছাড়া অন্য আমলকেও চরমভাবে বরবাদ করলো ।(মুয়াওা ইমাম মালিক)
নামাজ বান্দা ও প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার বড় মাধ্যমঃ সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তি হওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন , তুমি সিজদাহ করো এবং তোমার রবের নৈকট্য অর্জন করো। (আল আলাক ৯৬ঃ১৯)
অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং সকল সৎকাজের মাধ্যমে তার নৈকট্য লাভ করো । আর সৎকাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে আল্লাহর জন্য সিজদাহ করা। তাই আপনার ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক গড়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে নামাজ।কাজেই আপনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি সিজদাহ শুরু করুন। হযরত আবু হুরাইরা (রা) একটি হাদিস বর্ণনা করেন যে রসুল (সা) বলেছেন ,বান্দা স্বীয় প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তি হয় সিজদারত অবস্থায়। অতেএব তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দুয়া করো। (সহীহ আল বুখারি ও মুসলিম )