আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্ব মানা ঃমিরাজের প্রধান শিক্ষা হলো আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের একত্ব ও সার্বভৌমত্ব এর স্বীকৃতি । সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টি, স্থায়িত্ব,সংরক্ষণ ক্রমবিকাশ এবং ক্রমোন্নতি একমাএ আল্লাহর দান । যিনি অসীম ঙ্গান ও বিচক্ষনতার অধিকারী যার ইচ্ছা ও আদেশ নিরঙ্কুশভাবে আসমান ও যমিনের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু -পরমানুর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে ,যার হাতে রয়েছে জীবিকার চাবিকাঠি ,জীবনের মৃত্যুর রশি ও যিনি সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতার উৎস । মানুষের আনুগত্যে ,দাসত্ব স্তব -স্তুতি একমাএ আল্লাহর প্রাপ্য: এ ক্ষে েএ অন্য কারো ইবাদত না করা ,তার সাথে কারো শরিক না করা অন্যকারো সার্বভৌমত্ব না মানা । বান্দাদের কাছে আল্লাহর নূন্যতম চাওয়া হচ্ছে তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো গোলামি করবে না । জীবনের সবক্ষে েএ তারই আইন মেনে চলবে , তার সার্বভৌমত্ব অন্য কারো বিন্দুমাএ শরিক করবে না । মূলত ঃ এ হচ্ছে মিরাজের প্রধান ও প্রথম শিক্ষা । এ শিক্ষাকেই কুরআনের সুরা বনি ইসরাঈলে এভাবে বলা হয়েছে –
অর্থাৎ তোমার রবের সিদ্ধান্ত যে ,তোমরা একমাএ আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব,আনুগত্যে ও উপাসনা করবে না । মানুষের ফিতরত এই যে সে কারো না কারো নিকট মাথা নত করে । আনুগত্যে স্বীকার যদি আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য হয়ে থাকে ,তবে ইহকালে দুঃখ -দুর্ভোগ ,ভারসাম্যহীনতা আর পরকালিন জীবনে নিশ্চিত পরিণাম জাহান্নাম।
তাই মিরাজের প্রথম ও প্রধান শিক্ষায় বুঝানো হয়েছে -মানুষের সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা হতে হবে আল্লাহর আনুগত্য ,দাসত্ব ও উপাসনার ভিওিতে ।
পিতামাতার প্রতি উওম ব্যবহার
ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌল একক ব্যক্তি । ব্যক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে । ব্যক্তির প্রাথমিক সংগঠন পরিবার । আবার সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনের মৌল ইউনিট হলো পরিবার । তাই মিরাজের দ্বিতীয় শিক্ষায় তামাদ্দুনিক বিষয়ে পারিবারিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে । যদি তাদের একজন অথবা দুজনেই বৃদ্ধ অবস্থায় বেচে থাকেন ,তবে তাদের সঙ্গে উহ শব্দটি পর্যন্ত করো না ।তাদের তুচ্ছঙ্গান করবে না ,তাদের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে ।
এখানে বলা হয়েছে , পারিবারিক প্রশাসনে পিতামাতাই হচ্ছে মুখ্য । পিতামাতার অধিকার সন্তান সন্ততির ওপর প্রতিষ্ঠিত । সন্তান পিতামাতার অনুগত ও খাদেম হবে । তাদের বৃদ্ধাবস্থায় অত্যন্ত দায়িত্বানুভূতি সহকারে সেবাযত্ন করতে হবে । বার্ধক্যে উপনীত হয়ে পিতামাতা সন্তানের সেবাযত্নের মুখাপেক্ষি হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবন সন্তানের দয়া কৃপার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এ সময় যদি সন্তানের পক্ষ থেকে সামান্যও বিমুখতা প্রকাশ পায় ,তবে তাদের অন্তরে তা ক্ষত হয়ে দেখা দেয় । অপরদিকে বার্ধ্যক্যের উপসর্গসমুহ স্বভাবগতভাবে মানুষকে খিটখিটে করে দেয়। েএ অবস্থায় মিরাজের শিক্ষায় পিতামাতার মনোতুষ্টি ও সুখ শান্তি বিধানের জন্য কতিপয় আদেশ দেয়া হয়েছে ।
পিতামাতাকে উহ বলা যাবে না । এখানে উহ বলতে বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ পায় । এমনকি তাদের কথা শুনে বিরক্তিবোধক দীর্ঘশ্বাস ছাড়া এর অর্ন্তভুক্ত । রাসুল (সা) বলেন পীড়াদানের ক্ষে েএ উহ বলা হতেও কম কোনো স্তর থাকলেও তাও উল্লেখ করা হতো । মোটকথা যে কথায় পিতামাতার সামান্য কষ্ট হয় তাও নিষিদ্ধ।
তাদের প্রতি ভালো ব্যবহারের সাথে সাথে তাদের জন্য দোয়া করারও শিক্ষা দেয়া হয়েছে ।
হে পালনকর্তা তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর ,যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন -পালন করেছেন । পিতামাতার মৃত্যুর পরও দোয়ার মাধ্যমে সর্বদা পিতামাতার কল্যাণ কামনা করা হয়।
মিরাজের এই দ্বিতিয় শিক্ষা সমগ্র মানব জাতির জন্য । বস্তুবাদি পাশ্চাত্য জগত ও নাস্তিকতাবাদিরা বৃদ্ধ পিতামাতাকে ও একটা বোঝা মনে করে । কারণ তারা কর্মক্ষম নয়। পাশ্চাত্যে তো ছেলেমেয়েরা পিতামাতাকে ছেড়ে রাজি খুশির বিয়ের মাধ্যমে /লিভিং লিভিং টুগেদারের নামে খেয়াল খুশিমতো ঘর বাঁধে । আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । ফলে এদের পিতামাতারা শেষ জীবনে অত্যন্ত দুঃখ -দুর্ভোগে জীবন অতিবাহিত করে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহন করে ।
হে পালনকর্তা তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর ,যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন -পালন করেছেন। পিতামাতার সুখশান্তির জন্য সাধ্যানুযায়ি চেষ্টার সাথে সাথে তাদের জন্য দোয়া করতে হবে ,যেমন আল্লাহ করুণাবশত তাদের সব মুশকিল আসান করেন এবং কষ্ট দূর করেন । এ আদেশ অত্যন্ত বিস্তৃত। পিতামাতার মৃত্যুর পর ও দোয়ার মাধ্যমে সর্বদা পিতামাতার কল্যাণ কামনা করা হয়।
সম্পদের বন্টণ ব্যবস্থা ঃ মিরাজের ষষ্ঠ শিক্ষা হচ্ছে রিযিক বন্টণের ব্যাপারে কাউকে কিছু বেশি কাউকে কিছু কম দিয়েছেন ।নিশ্চয় তিনি স্বীয় বান্দাদের ওপর গভির দৃষ্টি রাখেন । অর্থ সম্পদ ও রিযিক বন্টনের ইসলামি নীতি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক জীবন গঠনে সহায়ক । এ ব্যবস্থা মেনে চললে কেউ রাতারাতি অর্থের পাহাড়ও গড়তে পারবে না এবং কেউ পথের ভিখারিও হয়ে যাবে না । বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সবাইকে সমান করার চেষ্টা একটি অবৈঙ্গানিক পদ্ধতি ,যা সমাজজীবনে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আসে। তাই এক্ষে েএ মিরাজের শিক্ষা হচ্ছে রিযিক বন্টণে কৃ্ ্ি এম পথ অনুসরণ না করে স্বাভাবিক পথ অনুসরণ করতে হবে ।
দারিদ্র্যের জন্য সন্তান হত্যা ঃ মিরাজের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে দারিদ্র্যের ভয়ে খাদ্যাভাব ও সাংসারিক অভাব অনটনের আশঙ্কাই সন্তান হত্যা না করা । বর্তমান বংশধরদের জীবিকার ব্যবস্থাপণা আল্লাহ যেভাবে করেছেন ,ভবিষ্যত বংশধরগণের ঠিক তেমনি করবেন ।
তোমরা অভাবের তাড়নায় স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করো না ,আমি তাদের ও তোমাদের জীবিকা দান করে থাকি।