মৃত ব্যক্তির স্মরণে কিছু কথা

হযরত ইবনে ওমর (রা)থেকে  বর্ণিত ‘‘ যে দিন মানব  জাতি  জগত  সমুহের  পতিপালকের সামনে দাড়াবে (সুরা মুতাফফিন) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন  তাদের এক একজন  নিজ দেহ নিঃসৃত ঘামের মধ্যে দুই কান  বরাবর  ডুবন্ত অবস্থায় দাড়িয়ে থাকবে । আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন ,                           তোমরা অধিক পরিমানে জীবনের স্বাদ হরণকারি  অর্থাৎ মৃত্যুকে  স্বরণ করো ।                                                                               ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত  এক আনসারী নবী  (সাঃ) এর নিকট এসে তাকে সালাম দিল ,অতঃপর বলল হে  আল্লাহর  রাসুল (সা) মোমেনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষাে উওম  কে ? তিনি বলেন স্বভাব চরিএ তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উওম -সে পুনরায় প্রশ্ন করলো  মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে ?                                                   তিনি বলেন  তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে  এবং মৃত্যু পরবর্তি জীবনের জন্য  উওম রুপে  প্রস্তুতি গ্রহণ করে  । ইবনে আউস (রা)  থেকে  বর্ণিত  রাসুল (স) বলেন  ‍বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি  যে নিজের  নফসকে নিয়নএন রাখে  এবং মৃত্যু পরবর্তি জীবনের জন্য কাজ করে ।আর নির্বোধ অকর্মণ্য এই ব্যক্তি যে তার নফসের  দাবির  অনুকরণ করে  এবং  আল্লাহর নিকট  বৃথা আশা করে ।  কাশেম (রা) থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন  আয়েশা (রা) বলেছেন  আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল ,কিয়ামতের দিন  হাশরের ময়দানে  মানব জাতিকে কি অবস্থায় সমবেত করা হবে? তিনি বলেন ঃ নগ্নপদে  উলগ্ন শরীরে  আমি বললাম নারীরাও ? তিনি বলেন ঃনারীরাও  আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল  এতে কি আমরা লজ্জিত হবো না? তিনি বলেন  হে আয়েশা তখনকার অবস্থা হবে ভয়ংকর । কেউ কারো প্রতি দৃষ্টিপাত করার মত অবস্থায়  থাকবে না ।                                 দেহের সাথে আত্মার সম্পর্কঃ                          দেহের  সাথে রুহ পাচভাবে সম্পৃক্ত  এবং এবং প্রত্যেক শ্রেণির হুকুম ও ভিন্ন।  নিম্নে তা আলোচনা করা হলো ।                   মাতৃগর্ভে  অবস্থীত  সন্তানের দেহ  ও রুহের সম্পর্ক ।    পৃথিবীতে  আগমণের পর মৃত্যু পর্যন্ত দেহ  ও রুহের  স্বাভাবিক সম্পর্ক । ঘুমন্ত অবস্থায়  দেহ ও রুহের  সম্পর্ক।  একদিকে বিচার করবে  দেহের সাথে সম্পর্কিত ,আবার অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেহ থেকে বিছিন্ন।

মৃত্যুর পর আলমে বরযখে  দেহ ও রুহের  সম্পর্ক ।যদিও মৃত্যুর পর  রুহ দেহ  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঃ কিন্তু একেবারে  সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না , সামান্য সম্পর্ক তথনও  বাকি থাকে ।  আর আমরা  প্রথমেই  ইবনে  হাযমের  দলীলের  জবাবে  হাদিসের আলোকে  আলোচনা করেছি যে  যখণ কোন ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে  সালাম করে ,তার সালামের জবাব দেওয়ার জন্য মৃতব্যক্তির দেহে প্রাণ সঞ্চার হয়। এটাও রুহ প্রত্যাবর্তনের  একটি বিশেষ ধরণ  এতে পুণরুথানের পুর্বে  দেহের  জন্য  নতুন জীবন  অনিবার্য হয় না ।

 

পুনরুথানের পর দেহ ও রুহের  সম্পর্ক ।  এটাই সবচেয়ে গাঢ় ও পরিপূর্ণ  সম্পৃক্ত ।যার  সামনে  উপরের  সম্পর্কগুলো  একেবারেই তুচ্ছ ও ম্লান । কেননা   এ সম্পর্কের  পর  আর মৃত্যু আসবে না ,এমনকি  শরীরে  কোন  প্রকার  পরিবর্তনও  সাধিত  হবে না ।  রুহের অবস্থা দেহের অবস্থা  থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন । যেমন ধরুন ,দুটি সামস্যপূন্য  ‍ও একই ধরনের  রুহের মধ্যে  ঘনিষ্ট  সম্পর্ক  সৃষ্টি হয় । যদিও তাদের মধ্যে বিস্তর দুরত্ব থাকে ।  তেমনি ভাবে  শএুভাবাপন্ন  দুটি রুহের মধ্যে থাকে বিস্তর ফা্রাক । যদিও দেহ পাশাপাশি বিরাজ করে ।  ‍রুহের আরোহণ  অবতরণ  এবং নিকট দুর হওয়া  দেহের আরোহণ  অবতরণ  ও নিকট  দুর হওয়ার মত  নয়  কেননা রুহ সামান্য সময়ে (রুহ কবজ করা থেকে  কবরে  রাখা পর্যন্ত) সপ্ত আকাশে  বিচরণ করে  পুনরায় ফিরে আসে ,যা শরিরের জন্য  মোটেই সম্ভব নয় । তেমনিভাবে রুহ স্বপ্নে  এবং জাগ্রত  অবস্থায় বিচরণ করে । কতক লোক রুহকে  সূর্য  এবং তার রশ্মির সাথে  তুলনা করেছেন ।কেননা  সূর্য আকাশে অবস্থান করছে ,অথচ  তার রশ্মি  পৃথিবিকে আলোকিত করছে ।কিন্তু আমাদের শায়খ বলেন , এ দৃষ্টান্ত ভুল । কারণ  সূর্য তো আর পৃথিবিতে  নেমে আসে না  এবং  পৃথিবিতে  সূর্যরশ্মি  খোদ সূর্যও নয়  আর তার কোন গুনও নয়  বরং উহা সূর্যের প্রভাব ,যা সূর্য থেকে সৃষ্ট হয়ে  পৃথিবিতে আপতিত হয়। কিন্ত রুহ নিজেই উঠানামা করে ।                                                    বদরের নিহতদের সম্পর্কে  নবি করিম  (স)  কাছে  সাহাবায়ে কেরামের জিঙ্গাসা যে  যাদের লাম পচে গেছে  আপনি তাদের  সাথে কিভাবে কথা বলছেন ?                                                                     এবং নবি করিম (সা)   প্রদও  এ জবাব যে তারা তার কথা শুনেছে ।   এ কথার পরিপন্থি নয় যে তখন তাদের  রুহ  তাদের দেহে  ফিরে  এসেছিল  যার ফলে তারা তার কথা শুনেছে  অথচ  তাদের  লাশ পচে  গিয়েছিল ।  কেননা  সম্বেধন তো শুধু  রুহকেই  করা হয়েছিল  যেগুলোর  ঐ গলিতদেহের সাথে এক প্রকার সম্পর্ক ছিল।         বরযখে  শাস্তি  ও প্রশান্তি দেহ  ও আত্মা উভয়ের ওপরই হয়      ভ্রষ্ট  মতবাদগুলো  জানার  পর  উম্মতের পূর্বসুরি  ও ইমামদের  মতামত  অনুসন্ধান করা উচিত । তাদের মতে  কবরে  অবশ্যই  শাস্তি  বা শান্তি দেয়া হবে  এবং উহা দেহ  ও রুহ উভয়ের ওপরই  আরোপিত  হবে  । রুহ দেহ থেকে  বিছিন্ন হওয়ার পরও  অবশিষ্ট থাকে  এবং তাদের আমল অনুযায়ি শান্তি বা প্রশান্তি লাভ করে ।কখনও আত্মা দেহের সাথে মিলিত হয়  এবং আত্মার সাথে  দেহেরও  আযাব বা  আরাম হয় ।  কিয়ামতের দিন আত্মা দেহে  ফিরিয়ে দেয়া  হবে  এবং মানুষ কবর থেকে  ওঠে  আললাহ তাআলা র সম্মুখে দন্ডায়মান হবে  । দেহের পুনরূথানের  ব্যপারে  মুসলিম ইহুদি  খ্রীষ্টান  সকলেই  একমত ।

Leave a Comment