সদাকাতুল ফিতর একটি যুক্ত শব্দ।এখানে সদাকা শব্দটি একবচন ,বহুবচনে সদাকাত এর আভিধানিক অর্থ দান করা ।আর ফিতর শব্দটি বাবে নাসারা এর মাসদার ,মাদ্দাহ ফা-ত্ব-র জিনসে সহিহ ।এর আভিধানিক অর্থ ভঙ্গ করা ,সৃষ্টি করা, বিদীর্ণ করা ইত্যাদি।
সুতরাং সদাকাতুল ফিতর অর্থ হলো ভঙ্গ করার দান ।সদাকা শব্দের অর্থ দান করা আর ফিতর শব্দের অর্থ-ভঙ্গ করা । এখানে ফিতর শব্দের অর্থ হবে শেষ হওয়া ।রোজার শেষ বা সমাপ্তির সাথে সদাকা সংশ্লিষ্ট তাই এটাকে সদাকাতুল ফিতর নামে অভিহিত করা হয় ।
শরীয়তের পরিভাষায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবকগ্রস্থদের প্রতি মুসলমানদের প্রদও ওয়াজিব সদকা ।
মুসলমান ধনবান ব্যক্তিগণ ঈদুল ফিতরের নামাযের পূর্বে এক সা বা অর্ধ সা পরিমান যে খাদ্য গরিবদেরকে দান করে থাকে ,তাকে সদাকাতুল ফিতর বলা হয় । কতিপয় ফিকহ বিদের মতে ঈদুল ফিতরের দিন মালদার ব্যক্তির ওপর তার নিজের ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে যে সদকা আদায় করতে হয়।তাকে সদাকাতুল ফিতর বলে । আলোচ্য হাদিস দ্বারা বোঝা যায় সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ফরয ।মূলত এর হুকুম কী হবে এ ব্যাপারে ফকিহগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে । যেমন –
আবু হানিফার অভিমত ঃইমাম আবু হানিফার (র)ও সাহেবাইনের মতে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব ;এটা ফরজ বা সুন্নত নয় ।
শাফেয়ী ও আহমদের অভিমত ঃ ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (র) এর মতে ,সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ফরজ । কেননা হাদিসে ফারজ শব্দের উল্লেখ আছে ।
মালেকের অভিমত ঃ ইমাম মালেকের মতে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ।
তার দলিল হচ্ছে- তার মতে উদ্বৃত হাদীসে ফারয শব্দের অর্থ হলো কাদর কাজেই এটা দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হবে না ।
কতিপয়ের অভিমত ঃ কতিপয় আলেম বলেন ,সদকাতুল ফিতর আদায় করা পূর্বে ফরয ছিল ,কিন্ত যখন যাকাত ফরয হয় তখন এর বিধান রহিত হয়ে গেছে । তবে এ মতটি দুর্বল ।
আহলে হাদীসের অভিমত ঃ আহলে হাদীসের মতে,সদকাতুল ফিতর যাকাতের ন্যায় ফরয ।
আহনাফের পক্ষ থেকে প্রত্যুওরে ঃ ইমাম শাফেয়ী,আহমদ ও মালেক (র) এর দলীলের প্রত্যুওরে ওলামায়ে আহনাফের প্রখ্যাত ফিকহবিদ আল্লামা ইবনুল হুমাম (র) বলেন –
শাফেয়ী ও আহমদ (র)এর পেশকৃত যেসব হাদীসে ফরয শব্দ উল্লেখ রয়েছে তা দ্বারা ওয়াজিব উদ্দেশ্য ।
সদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাযের দিকে বের হওয়া ও সেদিনের পরে বিলম্ব করা বৈধ কিনা , এই ব্যাপারে ইমামগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে । যেমন –
আবু হানিফার অভিমতঃ ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দীষ্ট কোনো সময়সীমা নেই । তবে সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব ,ঈদের পরে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে ।
এটা সাধারণ নির্দেশ এতে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ হয়নি ।
শাফেয়ীর অভিমত ঃ ইমাম শাফেয়ীর (র) এর মতে সদকাতুল ফিতর রমযানের মধ্যে এবং ঈদের দিনের মধ্যেই আদায় করতে হবে ।বিলম্ব করা যাবে না ।বিলম্ব করলে আদায় হবে না বরং কাযা হবে ।
হাসান ইবনে যিয়াদের অভিমতঃহাসান ইবনে যিয়াদ (র) এর মতে সদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা আদায়হবে না । কেননা এটা ঐ দিনের সাথেই নিদিষ্ট ।
সদাকাতুল ফিতরের পরিমাণনির্ণয়ে ইমামগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে । যেমন- ইমাম মালেক .শাফেয়ী ও আহমদ(র) মতে সদকায়ে ফিতর আদায়ে প্রত্যেককে এক সা তথা সাড়ে তিন সের পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে । গম .যব ,খেজুর ও কিশমিশ এসবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
ইমাম আবু হানিফার অভিমত ঃ ইমাম আবু হানিফার (র) এর মতে ,গম দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করলে নিসফে সা দিতে হবে । আর অন্যান্য শস্য দ্বারা আদায় করলে পূর্ণ এক সা তথা সাড়ে তিন সের দিতে হবে ।
ইমামএয়ের দলীলের প্রত্যুওর ঃ ইমামএয়ের পেশকৃত অভিমতের জবাবে ইমাম তাহাবি (র) বলেন গম অর্ধ সা দেয়া ওয়াজিব ।কিন্তু আবু সাঈদ খুদরী(রা)বর্ণীত হাদীসে পূর্ণ সা দেয়া আরবি শব্দ তাতয়ু ছিল । কেননা আবু সাঈদ খুদরী (র) নিজেই বলেছেন-
ইমাম তাহাবি (র) যুক্তি পেশ করেছেন ,কসমের কাফফারায় অর্ধ সা গমের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম যখন ঐকমত্য পোষণ করেছেন ,তখন এটার ওপর কেয়াস করে বলা যায় ,সাদাকাতুর ফিতর এর মধ্যেও অর্ধ সা গম দেয়া অধিক যুক্তিযুক্ত।
সদাকাতুল ফিতর কার ওপর কখন ওয়াজিব হবে ঃসদকায়ে ফিতর কারো ওপর ওয়াজিব হওয়ার জন্য ইসলামী শরীয়তে যে সকল শর্তারোপ করেছে ,তা হচ্ছে-