সূরা আল বাকারা বাংলা অর্থ সহ

সূরা আল বাকারা
সূরা আল বাকারা

হে বনী ইসরাঈল  আমার সেই নিয়ামতের  কথা স্মরণ করো ,যা আমি তোমাদের দান করেছিলাম এবং  একথাটিও যে আমি দুনিয়ার  সকল জাতির ওপর  আমি দুনিয়ার সকল জাতির ওপর  তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম । আর তোমরা সেই দিনকে ভয় করো  যেদিন কেউ কারো সামান্য উপকারে আসবে না । কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ কবুল করা হবে না ,বিনিময়  নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না  এবং অপরাধিরা  কোথাও থেকে সাহায্য লাভ  করতে  পারবে না ।

স্মরণ করো  সেই সময়ের কথা যখন আমি  ফেরাউনিদের  দাসত্ব  থেকে  তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলাম । তারা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তিতে  জর্জরিত  করে  রেখেছিলো  তোমাদের পুএ  সন্তানদের  যবেহ করতো   এবং তোমাদের  কন্যা সন্তানদের জীবিত রেখে দিতো ।  এ অবস্থায়  তোমাদের রবের পক্ষ  থেকে তোমাদের জন্য বড়োই কঠিন  পরিক্ষা ছিলো ।

নামায  ও যাকাত প্রতিটি যুগে দীন  ইসলামের  সর্বাধিক  গুরুত্বপূর্ণ  স্তম্ভ হিসেবে  স্বীকৃত হয়ে এসেছে।  অন্য সব নবীদের মতো বনী ইসরাঈলের  নবীগণও্র  এর প্রতি কঠোর তাগিদ দিয়েছিলেন । কিন্তু ইহুদীরা এ ব্যপারে  উদাসীন হয়ে পড়েছিল । তাদের সমাজে  জামায়াতের সাথে  নামায পড়ার ব্যবস্থাপনা  প্রায় বিশৃঙ্খল  হয়ে গিয়েছিলো । বেশিরভাগ  লোক  ব্যক্তিগত  পর্যায়েও নামায ছেড়ে দিয়েছিলো । আর যাকাত দেয়া বর্জন করে তারা সুদ খেতো ।        অর্থাৎ যদি  সৎকর্মের পথে চলা  তোমরা কঠিন  মনে করে  থাকো  তাহলে সবর  ও নামায  এ কাঠিন্য দূর করতে পারে । এদের সাহায্যে শক্তি  সঞ্চয় করলে  এ কঠিন পথ  পাড়ি দেয়া তোমাদের  জন্য  সহজ হয়ে যাবে ।                                                                             সবর এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে  বাধা দেয়া ,বিরত রাখা  ও বেধে রাখা । এ ক্ষে  েএ মজবুত ইচ্ছা  অবিচল  সংকল্প  ও প্রবৃওির  আশা -আকাংখাকে  এমনভাবে  শৃংখলাবদ্ধ করা বুঝায়  যার ফলে  এক ব্যক্তি  প্রবৃওির তাড়না  ও বাইরের  সমস্যাবলির  মোকাবিলায়  নিজের  হ্দয়  ও বিবেকের পছন্দণিয়  পথে  অনবরত এগিয়ে যেতে থাকা ।  এখানে আল্লাহর  এ বক্তব্যের  উদ্দেশ্য হচ্ছে এ নৈতিক গুনটিকে  নিজের মধ্যে  লালন করা  এবং বাইরে থেকে  একে  শক্তিশালি করার জন্য  নিয়মিত নামায পড়ো।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর  অনুগত নয়  এবং আখেরাতে  ঈমান রাখে না  তার জন্য  নিয়মিত নামায পড়া  একটি আপদের শামিল । এ ধরনের  আপদে  সে কখনো  নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে না । কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায়  ও সানন্দে  আল্লাহর  আনুগত্য  নিজেকে   সোপর্দ করেছে  এবং যে ব্যক্তি  মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর  সামনে হাজির হবার কথা চিন্তা করে  তার জন্য নামায পড়া নয় ,বরং নামায ত্যাগ করা কঠিন।

এখানে সেই যুগের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে  যখন দুনিয়ার  সকল জাতির  মধ্যে  একমাএ  বনী ইসরাঈলের  কাছে  আল্লাহ প্রদও  সত্যঙ্গান ছিল  এবং তাদেরকে  বিশ্বের জাতিসমুহের  নেতৃত্বের পদে  অধিষ্ঠিত করা হয়েছিলো । অন্যান্য জাতিদেরকে  আল্লাহর  ইবাদত ও দাসত্বের  পথে আহ্বান করতে  ছিলো  তার দায়িত্ব ।                            বনী ইসরাঈলের  আখেরাতে সম্পর্কিত আখিরাত সম্পর্কিত আকিদার মধ্যে গলদের অনুপ্রবেশ  ছিলো  তাদের বিকৃতির  অন্যতম বড় কারন । এ ব্যপারে তারা এক ধরনের  উদ্ভট চিন্তা  পোষণ করতো । তারা মনে করতো  তারা মহান মর্যাদাসম্পন্ন  নবীদের সন্তান । বড়ো বড়ো আওলিয়া ,সৎকর্মশীল  ব্যক্তিবর্গ ও যাহেদদের সাথে তারা সম্পর্কীত। ঐসব মহান মনীষির বদৌলতে  তাদের পাপ  মোচন  হয়ে যাবে ।                                                                                             তাদের সাথে  সম্পর্কিত হয়ে  এবং তাদের  আচল জড়িয়ে  ধরে থাকার  পরও  কোনও ব্যক্তি  কেমন করে শাস্তি ভোগ করতে পারে ।  এসব কুহক ভরসা তাদেরকে দীন থেকে  উদাসীন করে  গুনাহের  মধ্যে  ডুবিয়ে  দিয়েছিলো  তাই নিয়ামত  ও আল্লাহর  অসীম অনুগ্রহের  কথা  স্মরণ করিয়ে  দেয়ার সাথে  সাথেই  তাদের এই ভুল  ধারণাগুলোও দূর করা হয়েছে এখান থেকে  নিয়ে  পরবর্তী কয়েক রুকু  পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে  যেসব  ঘটনার  প্রতি  ইংগিত করা হয়েছে  সেগুলো  সবই  বনী ইসরাঈলের ইতিহাসের  সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনা । ইসরাঈল  জাতির  আবাল -বৃদ্ধ -বনিতা  সবাই ‍ সেগুলো জানতো ।  তাই ঘটনাগুলোর  বিস্তারিত  আলোচনা না করে  এক একটির ঘটনার প্রতি সংক্ষেপে ইংগিত করা হয়েছে মাএ । এ ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমে  মহান আল্লাহ আসলে  যে বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে  তুলে ধরতে চান  সেটি হচ্ছে একদিকে আল্লাহ তোমাদের  প্রতি  এসব অনুগ্রহ করেছিলেন  অন্যদিকে তার জবাবে  এসব হচ্ছে তোমাদের কীর্তিকলাপ।                  আমি আলে  ফেরাআওন  শব্দের  অনুবাদ করেছি  ফেরাউনীরা । এতে  ফেরাউনের  বংশ ও মিসরের  শাসকগোষ্ঠি উভয়ই অন্তরভুক্ত হয়েছে                                                                                               যে চুল্লির মধ্যে তোমাদের নিক্ষেপ  করা হয়েছিলো তা থেকে  তোমরা খাটি  সোনা  হয়ে বের হও  না ভেজাল হয়ে সেটিই ছিলো পরিক্ষা । এতো বড় বিপদ  থেকে  অলৌকিক ভাবে মুক্তিলাভ করার পরও  তোমরা  আল্লাহর  কৃতঙ্গ বান্দায় পরিণত হও কিনা , এ মর্মেও ছিলো পরিক্ষা ।                                                                                       মিসর থেকে  মুক্তিলাভ করার পর  বনি ইসরাঈল  যখন সাইনা  উপদ্বিপে  পৌছে গেলো  তখন মহান আল্লাহ  হযরত মুসা  আ কে চল্লিশ দিন -রাতের  জন্য  তুর পাহাড়ে ডেকে নিলেন ফেরাউনের দাসত্বমুক্ত  হয়ে  যে জাতিটি  এখন মুক্ত পরিবেশে  স্বাধীন  জীবনযাপন করছে তার জন্য শরীয়তের  আইন  এবং  জীবন যাপনের  বিধান  দান করাই ছিলো  এর উদ্দেশ্য ।                                                              বনী ইসরাঈলের  প্রতিবেশি  জাতিগুলোর মধ্যে গাভি  ও  ষাড় পুজার  রোগ  সর্বএ  ছড়িয়ে  ছিলো । মিসর ও কেনানে  এর প্র্রচলন ছিলো  অত্যন্ত ব্যাপক । হযরত ইউসুফ আ এর পরে  বনি ইসরাইল  যখন  অধপতনের শিকার হলো  এবং ধিরে ধিরে  কিবতীদের  দাসত্ব  শৃঙ্খলে  আবদ্ধ হয়ে পড়লো  তখন অন্যান্য  আরো বহু  রোগের  মধ্যে এ রোগটিও  তারা নিজেদের  শাসকদের  থেকে গ্রহণ করেছিলো ।              (বাছুর পযজার  এ ঘটনাটি বাইবেলের  যাএা  পুস্তকের ৩২ অনু্ চ্ছেদে  বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।

Leave a Comment