ইয়-সীন ,প্রঙ্গাময় কুরআনের কসম ।আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন,তাদের পক্ষে দুই সমান :তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না । ইবনে আব্বাস (রা) বলেন রাসুল (সা) কাবাঘরে উচ্চস্বরে কেরাত পাঠ করতেন । মুশরিকরা কুরআন শ্রবন করে কষ্ট পেত।তাই একদিন সকলে মিলে নবিজিকে কষ্ট প্রদানের উদ্দেশ্য সমবেত হলো এবং তাকে ধরার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলের হাত ঘাড়ের সঙ্গে আটকে দিলেন এবং চক্ষুকে অন্ধ করে দিলেন । তারা বুঝতে পারল এটা রাসুল (সা) এর সঙ্গে ধৃষ্টতার শাস্তি । তাই সকলে মিলে উল্টো তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে গেল এবং বলল ,হে মুহাম্মদ আমরা আপনার নিকট আল্লাহ তায়ালার কসম ও আত্মিয়ের দোহাই দিয়ে বলছি ,আপনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করুন এবং দোআ করুন । কুরাইশদের প্রত্যেক শাখাগোএই কোন না কোনভাবে নবীজির বংশের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল । তাই বলতে গেলে মক্কার সকল কুরাইশ গোএই কোন না কোন সূ্ েএ রাসুল (সা) এর আত্মিয় ছিলেন । তাই তারা আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে দুআ প্রার্থনা করলে নবীজি দুআ করলেন । এতে সকলেই পূর্বের অবস্থা ফিরে এলো। এই প্রসঙ্গে সূরা ইয়াসিনের প্রথম দশটি আয়াত নাজিল হলো। ইবনে আব্বাস (র) বলেন আশ্চর্যের বিষয় হলো এত বড় নিদর্শন তারা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করার পরও একটা লোকও হেদায়াত প্রাপ্ত না । আমি তাদের গর্দানে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি ।ফলে তাদের মস্তক উর্দ্ধমুখি হয়ে গেছে । আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচির স্থাপন করেছি , অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি ,ফলে তারা দেখে না । ইকরামা (রহ) বলেন আবু জেহেল একবার বলল আমি যদি মুহাম্মদ (সা) কে দেখতে পাই তবে এই করব সেই করব ইত্যাদি ।তার এই কথা বলার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাকে অন্ধ করে দিলেন । ফলে সে চিৎকার করে বলতে লাগল ,মুহাম্মদ কোথায় ?মুহাম্মদ কোথায় ?লোকেরা বলল এই তো মুহাম্মদ (সা) কিন্ত সে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না । শুধুই চিৎকার যাচ্ছিল । এই প্রেক্ষাপটে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল । ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেন আয়াতটি আবু জাহেল ,আবু সুফিয়ান ,নজর ইবনে হারেস ,আবু জাহেলের পত্নি উম্মে জামিল ,হুয়াইতিবসহ কুরাইশদের একটি দলের ব্যপারে নাজিল হয়েছে । নবিজি কুরাান তেলাওয়াতরত হলে এসব লোক তাকে কষ্ট দিত । ফলে নবীজি কুরআন তিলাওয়াতরত হলে এসব লোক তাকে কষ্ট দিত । ফলে নবিজি কুরআন তিলাওয়াতরত হলে আল্লাহ তায়ালা এদের চোখে পর্দা টেনে দিলেন । তাই তারা নবিজির পাশ দিয়েই যেত ,কিন্ত তাকে দেখতে পেত না ।যেন তাদের ও নবীজির মাঝে ছিল অলঙ্ঘণিয় কোনো দেয়াল ,যা ভেদ করে দৃষ্টিগোচর হতো না ।
আবু সাঈদ খুদরি (রহ) বলেন ,বনু সালামার লোকজন মদিনার উপকন্ঠে বসবাস করতেন । একবার তারা মসজিদে নববির কাছে এসে করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । তাদের এই ইচ্ছার প্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয় এবং নামাজের জন্য দুর থেকে মসজিদে আগমনের প্রতিটি কদমের সওয়াব লিপিবদ্ধ হয় বলে আয়াতে ঘোষনা করা হয় । আয়াতটি নাজিল হলে বনু সালামার লোকদেরকে ডেকে এনে আয়াতটি তেলাওয়াত করে শোনান এবং বলেন ,তোমাদের প্রতিটি কদমের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয় । তার কথা শুনে বনু সালামার লোকজন উক্ত ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন। মুসলিম শরিফে হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ,জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন মসজিদের কাছাকাছি কিছু জায়গা খালি হয়। তাতে বনু সালামার লোকেরা মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল । এই খবর রাসুল এর কাছে পৌছলে তিনি তাদেরকে বললেন ,তোমরা নাকি মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছ? তারা বলল ,হ্যাঁ ইয়া রাসুল আমরা মসজিদের কাছাকাছি যাওয়ার মনস্থ করেছি । রাসুল (সা) বললেন হে বনু সালামা !তোমরা তোমাদের ঘরেই থাক ,তোমাদের পদচিন্হ লেখা হবে । তোমরা পদচিন্হ লেখা হবে । সরা ইয়াসিনের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের আলোচনা চলছে । এই আলোচনার একটি অংশ হিসেবে পূর্বের আয়াতে আসমানে আল্লাহর স্বীয় কুদরতে তারকারাজী উদীত হওয়া ও চলমান থাকার বিষয়ে উল্লেখ করে সমুদ্রে কীভাবে আল্লাহ তাআলার কুদরতে জাহাজ চলাচল করে তা উল্লেখ করা হয়েছে তাই পূর্বের আয়াতের মিল ও মুনাসাবাত রয়েছে । পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের কথা উল্লেখ করে বান্দাদের প্রতি স্বীয় অপার অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন। উক্ত অনুগ্রহের বিষয়ে আলোচনা করার পর আলোচ্য আয়াতে স্থলভাগের সৃষ্টি ও বাহনের নেয়ামতের কথা উল্লেখকরতঃউট ,গাধা ,খচ্চর ইত্যাদি বাহনের কথা উল্লেখ করেছেন । যেহেতু তৎকালিন যুগে এবং বর্তমানেও মানুষের বাহন ও পণ্যসামগ্রি বহনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাহন হলো স্থলজ ও পানির বাহন ,আর একটির সঙ্গে আরেকটির গভির সম্পর্ক রয়েছে । তাই পূর্বের আয়াতে পানির বাহনের কথা উল্লেখ করার পর এই আয়াতে স্থলজ বাহনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । এই দৃষ্টিকোণে উভয়ে আয়াতের মধ্যে গভির মুনাসাবাত ও যোগসূএ রয়েছে। পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের কথা উল্লেখ করে বান্দাদের প্রতি স্বীয় অপার অনুগ্রহের কথা উল্লেক করেছেন । উক্ত অনুগ্রহের বিয়য়ে আলোচনা করার পর আলোচ্য আয়াতে স্থলভাগের সৃষ্টি ও বাহনের নেয়ামতের কথা উল্লেখকরত ঃউট ,গাধা ,খচ্চর ইত্যাদি বাহনের কথা উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তৎকালিন যুগে এবং বর্তমানেও মানুষের বাহন ও পণ্যসামগ্রি বহনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাহন হলো স্থলজ ও পানির বাহন , আর একটার সাথে আরেকটার গভীর সম্পর্ক রয়েছে , তাই পূর্বের আয়াতে পানির বাহনের কথা উল্লেখ করার পর এই আয়াতে স্থলজ বাহনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । এই দৃষ্টিকোণ উভয় আয়াতের মধ্যে গভির মুনাসাবাত ও যোগসূএ রয়েছে । পূর্বের আয়াতসমুহে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ওপর একাধিক কুদরত ও নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । কিন্ত কাফেররা এসব নিদর্শন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেনি । নিদর্শন দেখেও শিক্ষাগ্রহণ ও উপকৃত না হওয়ার আলোচনার পর আল্লাহর কালাম তথা কুরআনের মহাবাণী থেকেও শিক্ষা ও হেদায়াত গ্রহণ না করার আলোচনা করা হয়েছে এবং আলোচ্য আয়াতেও শিক্ষা ওহেদায়াত গ্রহণ না করার কথা বলা হয়েছে তাই পূর্বের আয়াতসমুহের সাথে আলোচ্য আয়াতের যোগসূএ ও মুনাসাবাত রয়েছে । যখন তোমদের বলা হয় ,আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করো । তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে ,ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন ,আমরা তাকে কেন খাওয়াবো?তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছে। কুশায়রি (রহ) বলেন মক্কার কিছু জিন্দিক ছিল যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করত না । এদের সামনে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন , আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিজিক দেন ‘ এজাতিয় কথা বললে তারা বিদ্রুপ করে কথাগুলো বলত । তাদের ব্যাপারে আয়াতটি নাজিল হয় ।
আরবদের মধ্যে আগে থেকেই একটা প্রচলণ ছিল ,তারা কিছু কিছু প্রাণি ও সম্পদ আল্লাহ তাআলার জন্য খাস ও বরাদ্দ করত । একবার অভাবি ও গরিব মুমিন মিসকিনগণ কুরাইশদেরকে বললেন তোমরা তোমাদের যেসব সম্পদ আল্লাহ তাআলার জন্য বরাদ্দ ও খাস করেছ বলে দাবি করো সেগুলোর কিছু অংশ আমাদেরকে দান করো । তাদের এই কথার মোকাবেলাই কুরাইশরা মন্তব্য করে আল্লাহ-ই তো ইচ্ছা করলে তোমাদের খাওয়াতে পারেন ! এই প্রেক্ষাপটে আয়াতটি নাজিল হয়েছে ।
- বিঃদ্রঃ=ডিজিটাল মার্কেটিং আটিকেল রাইটিং ব্লগ রাইটিং এর জন্য হেল্প লাগলে যোগাযোগ করুন