সূরা নিসা আয়াত ১

জাবের (রা) বলেন ,আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবু বকরকে  সাথে করে নবীজি আমাকে বনু  সালামায় দেখেতে আসেন । আমি তখন অচেতন । নবী আলাইহিস সালাম পানি চাইলেন  অজু করলেন। অজুর পানি আমার ওপর ছিটিয়ে দিলেন ।এতে আমার চৈতন্য ফিরে আসে । আমি জিঙ্গেস করি ,ইয়া রাসুলুল্লাহ !আমার সম্পত্বিগুলো কি করব ? তখন  আল্লাহ তাআলা মিরাসের এই  আয়াতটি নাজিল করেন ।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন,এক নারী তার দুইজন কন্যা নিয়ে  নবীজির খেদমতে হাজির হন । তিনি বলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ !এরা সাবেত ইবনে কায়েসের মেয়ে কোন বর্ণনায় এসেছে সাদ ইবনে রাবী’-র মেয়ে ।যে আপনার সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়েছে । এদের চাচা এসে সমস্ত সম্পওি নিয়ে গেছে ।এদেরকে  কিছুই দেয়নি । এদের ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা ?অর্থ -বিও কিছু না থাকলে তো কেউ তাদেরকে বিয়ে করতে আগ্রহি হবে না । নবী আলাইহিস সালাম বলেন ,এ ব্যাপারে আল্লাহই হুকুম দিবেন । এরপর উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয় । নবী (আ) বলেন ,এ ব্যাপারে  আল্লাহই হুকুম দিবেন । এরপর উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয় ।নবী আলাইহিস সালাম ওই চাচাকে ডেকে বলেন ,এই নারীকে অষ্টমাংশ দাও ।মেয়েদেরকে দুই তৃতীয়াংশ দাও ,বাকিটা তোমার ।

সুদ্দি বলেন ,জাহেলী যুগে মানুষ নারীদেরকে মিরাস দিত না । যুদ্ধে সক্ষম নয় ,এমন ছেলেদেরকেও নয় । শায়েরে রাসুল হাসসান ইবনে সাবেত (রা)  এর ভাই আব্দুর রহমান  ইবনে সাবেত মারা যান । পাঁচজন কন্যা সন্তান তিনি রেখে যান । ওয়ারিসরা এসে সম্পওি নিয়ে ।তার পত্নি উম্মে কাজ্জাহ বা উম্মে কাহলা  নবী আলাইহিস সালামকে বিষয়টি অবহিত করেন । এর সাথে  বিবি  অংশ কি হবে, সে বিধানও আল্লাহ তাআলা নাজিল করেন ।

আর তোমাদের নারীদের  মধ্য থেকে  যারা ব্যভিচার করে ,তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্যে থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করো ।  অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবে তোমরা তাদেরকে ঘরের মধ্যে  আবদ্ধ রাখো ,যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু হয় । অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথ তৈরী করে দেন। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে দুজন অপকর্ম করবে ,তাদেরকে তোমরা শাস্তি দাও ।অতঃপর যদি তারা তওবা করে এবং শুধরিয়ে নেয় তবে তোমরা তাদের থেকে বিরত থাক ।নিশ্চয়  আল্লাহ তাওবা কবুলকারী,দয়ালু ।নিশ্চয় তাওবা কবুল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য ,যারা অঙ্গতাবশত মন্দ কাজ করে । তাওবা শিঘ্রই তাওবা করে ।  অতঃপর আল্লাহ তায়ালা  এদের তাওবা কবুল করবেন  আর মহাজান্তা ও প্রঙ্গাময় ।এবং তাওবা নেই তাদের ,যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে  অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়:তখন বলে ,আমি এখন তাওবা করলাম ,আর তাওবা তাদের জন্যও নয় ,যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়:আমি এদের জন্যই তৈরী করেছি য নএণাদায়ক আজাব ।

পূর্বের আয়াতের সাথে মুনাসাবাত ঃ

পূর্বে আল্লাহ তাআলা নারীদের  প্রতি ইনসাফ ও সদাচরণের  আদেশ করেছেন । মহর পরিশোধ ও মিরাস প্রদান করতে বলেছেন । জাহেলি যুগে তাদেরকে মিরাস দেয়া হত না । তারপর তাদের অন্যায় -অশ্লিলতার ওপর কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে এটাও তাদের প্রতি সদাচরণের অংশ ।এতে তাদের পরকাল সুন্দর হবে । অন্যায়ের পথ রুদ্ধ হবে । সাথে সাথে সূরার শুরুতে বিবাহের প্রতি উদ্বু্দ্ভ করা  হয়েছে । এখানে বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচারের কঠোরতা  আরোপ করা  হয়েছে ।

এরপর  আল্লাহ তায়ালা তাওবার কথা বলেছেন । তাওবাকারদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন ।  এর সাথে তওবার সময় শর্ত পরিষ্কার করে দিয়েছেন । সুতরাং পূর্বের  আয়াতসমুহে পাপের কথা এবং  এই আয়াতগুলোতে পাপ থেকে তাওবার নিয়মের কথা উল্লেখ থাকায় উভয়  আয়াতের মধ্যে মুনাসাবাত রয়েছে ।

এরপর আল্লাহ তাআলা তাওবার কথা বলেছেন । তওবাকারীদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন । এর সাথে তওবার সময় শর্তও পরিষ্কার করে দিয়েছেন। সুতরাং পূর্বের  আয়াতসমূহে  পাপের কথা এবং  এই আয়াতগুলোতে  পাপ থেকে তাওবার নিয়মের কথা  উল্লেখ থাকায়  উভয় আয়াতের মধ্যে মুনাসাবাত রয়েছে ।

হে মুমিনগণ !তোমাদের জন্য নারীদেরকে জবরদস্তি করে মিরাছের অধিকারী হওয়া হালাল নয় । আর তোমরা  তাদেরকে  আবদ্ধ করে রেখো না ,তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নেয়ার জন্য ,তবে  এমনও হতে পারে যে ,তোমরা কোনো কিছুকে  অপছন্দ করছ  আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।

বুখারী ,আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফে আব্দুল্লাহ  ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন ,কেউ যখন মারা যেত ,তার ওয়ারিসরাই তার পত্নির পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে নিত।কেউ চাইলে নিজেই বিয়ে করত ।চাইলে অন্যের কাছে বিয়ে দিত  ।বউয়ের পরিবারের মোকাবেলায় তাদের কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় কার্যকর হত । এই অন্যায় প্রথা বাতিল করে  আল্লাহ তায়ালা  এই আয়াত নাজিল করেন ।

ইবনে জারীর তাবারী (রহ) তার জামে্উল বয়ান’গ্রন্থে আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনায়ফ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন ,কায়স  ইবনে আসলাত যখন মারা যান ,তখন পূর্বের পত্নি থেকে তার এক সন্তান  এসে জাহেলি যুগের প্রথা অনুযায়ি তার বউকে বিয়ে করতে চাইল ।তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেন ।

আব্দুল্লাহ  আব্বাস  (রা) বর্ণনা করেন ,কোনো ব্যক্তি যখন বউ রেখে মারা যেত,তখন তার স্বজন কেউ এসে  ওই বিধবার ওপর তার কাপড় ছুড়ে দিত ।  এতে অন্যদের  জন্য ওই বউ নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সুন্দরি হলে সে নিজেই তাকে বিয়ে করত । আর  সুন্দরী না হলে এমনিতেই ফেলে রাখত। মারা গেলে তার সম্পওি  আত্বসাৎ করত । এমন অন্যথায় প্রথা  বাতিল আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাজিল করেন ।

আব্দুল্লাহ আব্বাস  (রা.) বর্ণনা করেন , কোনো ব্যক্তি যখন মারা যেত ,তার ছেলে বা স্বজন কেউ এসে ওই বিধবার ওপর তার কাপড় ছুঁড়ে দিত ।  এতে  অন্যদের জন্য ওই বউ নিষিদ্ধ হয়ে যেত । সুন্দরি হলে সে নিজেই  তাকে বিয়ে করত । আর সুন্দরী না হলে এমনিতেই ফেলে রাখত ।মারা গেলে তার সম্পওি আত্বসাৎ করত । এমন  অন্যথায় প্রথা বাতিল  আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাজিল করেন ।

ইবনে আব্বাস বলেন ,কোনো ব্যক্তি যখন মারা যেত ,তার ছেলে বা স্বজন কেউ তার বউ অধীকারী হত । মন চাইলে বিয়ে করে রাখত । না হয়  এমনিতেই আটকে রাখত । না হয়  এমনিতেই আটকে রাখত ।পরে তার মহর দিয়ে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য  করত।না তার মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকত । মৃত্যুবরণ করলে তার সম্পওি দখলে নিত।

জাহেলি যুগে ও ইসলামের শুরু যুগে মদিনাবাসীদের মধ্যে আজব  এক প্রথা বিরাজমান  ছিল। কোনো ব্যক্তির বউ রেখে মারা গেলে  অন্য বউ থেকে তার ছেলে বা তার স্বজনরা ছুটে  আসত ।নিজের কাপড় ওই অসহায় বিধবার ওপর । যে আগে কাপড় ছুড়ত সেই ওই নারীর কর্তা বনে যেত ।তার ইচ্ছার কাছে বিধবার নিজের কোনো চাওয়া-চাহিদার  কোনো মূল্য থাকত না ।চাইলে মহর ছাড়া নিজেই বিয়ে করে নিত ,মৃত স্বামী যে মহর দিয়েছিল সেই মহরেই ।মন চাইলে অন্য কারো কাছে বিবাহ দিত কিন্তু মহর নিজে নিত । বিধবাকে কিছুই দিত না । চাইলে ঝুলন্ত  অবস্থায় রেখে দিত ,মুক্তিপণ দিতে হতো । না হয় ধুকে ধুকে মরতে হতো ।মৃত্যূর পর তার সম্পওি ওই কাপড় নিক্ষেপকারী দখল করত ।

আবু কায়স  ইবনে  আসলাত  আনসারী নামের একজন ব্যক্তি  পত্নি কুবাইসা বিনতে মাআনকে রেখে  মারা যান । অন্য বিবি গর্ভ থেকে তার  এক সন্তান ছিল হিসন ।মুকাতিল (রহ) বলেন ,তার নাম ছিল কায়স ইবনে আবু কায়স ।সে এসে কুবাইশার ওপর কাপড় ছুঁড়ে দেয়। এভাবে সে কুবাইশার ‍বিবাহক্ষমতা অধিকার লাভ করে । পরে তাকে ঝুলিয়ে রাখে ।কাছেও আসে না  আবার খরচও দেয় না । যেন বাধ্য হয়ে মুক্তিপণ দিয়ে আজাদ হয়ে যায়। এভাবে তার জীবন সংকটাপন্ন হয় ।

কুবাইশা বাধ্য হয়ে নবী আলাইহিস সালামের কাছে  এসে বললেন ,আবু কায়স মারা গেছে ।প্রথা অনুযায়ি এখন তার ছেলে আমার বিবাহের মালিক ।দীর্ঘ দিন ধরে আমাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে  রেখেছে।কোনো প্রকার খরচ দিচ্ছে না।কাছে আসছেও না ।আমাকে মুক্ত করেও দিচ্ছে না।নবী আলাইহিস সালাম তাকে বলেন ,তোমার ব্যাপারে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত তুমি ঘরে গিয়ে  অপেক্ষায় থাকো।

কুবাইশা (রা) ফিরে যান।মদিনায় অব্সাথানকারী তার মতো নারীর কাছে এই সংবাদ পৌছে যায়।তারাও এসে নবীজীর কাছে  একই অভিযোগ করে বলেন , আমাদের অবস্থাও কুবাইশার মতো। তবে এতটুকু পার্থক্য যে , আমাদেরকে সৎ সন্তান নয় ,চাচাতো ভাইয়েরা বিয়ে  করেছে। তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন।

Leave a Comment