আলী (রা) এর জীবনীঃ তার নাম আলী উপনাম আবুল হাসান ও আবু তুরাব ।উপাধী মুরতাযা ,হায়দার ,আসাদুল্লাহ আল গালিব ।পিতার নাম আবু তালিব ,মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ ইবনে হাশিম ।
জন্মঃ তিনি রাসুল (সা) এর নবুয়ত লাভের দশ কিংবা আট বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন ।
ইসলাম গ্রহণ ঃ অধিকাংশের মতে পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্র্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন ।তখন তার বয়স কত ছিল ।তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না কারো মতে তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর কারো মতে ১৫ বছর,কারো মতে ১৬ বছর কেউ বলেন ১৮ বছর । কেউ বলেন ৮ বছর । ।
রাসুল (সা) এর সাথে সম্পর্ক ঃ তিনি হলেন রাসুল (স) এর চাচাতো ভাই ,জামাতা ও চতুর্থ খলিফা।রাসুল (সা) তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন ,রাসুল (সা) তার প্রসঙ্গে বলেছেন ‘তুমি আমার জন্য তেমন যেমন মুসার পক্ষে হারুন ছিলেন । তবে পার্থ্যক্য হলো আমার পরে আর কোন নবি আসবেন না ।
বিবাহঃ হিজরী দ্বিতীয় সনে রাসুল (সা) এর স্নেহধন্য কন্যা ফাতিমা (র) এর সাথে তার বিবাহ হয়। রাসুল (সা) ফাতিমাকে বলেন ।তুমি কি সন্তষ্ট নও আমি তোমাকে আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সাথে বিবাহ দিয়েছি। হিজরত : রাসুল (স) মদিনায় হিজরতের প্রাক্কালে আলী (রা) কে স্বীয় বিছানায় শুইয়ে রেখে গিয়েছিলৈন । মক্কার লোকেদের আমানতের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আলী (রা) যে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ছিলেন তা পালন শেষে তিন দিন পর মদিনায় হিজরত করেন ।
জিহাদে অংশগ্রহণ ঃ
তিনি বদর ,উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে যোগদান করেন এবং তাবুক ছাড়া অন্য সব অভিযানে রাসুল (সা) এর সঙ্গে ছিলেন। তাবুক অভিযানের সময় রাসুল (স) এর অনুপস্থিতিতে মদিনার শাসনভার তার ওপর ন্যস্ত ছিল । উহুদের যুদ্ধে তিনি ষোলটি আঘাতপ্রাপ্ত হন । তার প্রচন্ড আক্রমণে খায়বারের দুর্জয় কামুস দুর্গের পতন ঘটে।
খিলাফত লাভ ঃ ওসমান (রা) এর শহিদ হওয়ার পর তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাবে প্রথমে বিনীতভাবে অস্বীকার করেন । কিন্তু পাচ দিন পরে সাহাবিদের অনুরোধক্রমে তা গ্রহণ করেন । ৩৫ হিজরীতে২৫ যিলহজ্জ জুমাবারে মদিনার মসজিদে সমবেত মুসলিমরা খলিফা হিসাবে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন । প্রায় ৪ বছর নয় মাস কয়েকদিন খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন ।
আলী (র) এর সাথে মুয়াবিয়া (রা) এর দ্বন্দ্বঃ তিনি খিলাফতে আসীন হওয়ার পর আয়েশা ,তালহা ও যুবায়ের রা বসরায় গিয়ে ওসমান (রা) এর হত্যাকারিদের শাস্তি বিধানের দাবিতে তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের আয়োজন করে ।তিনি তাদের বিরুদ্ধে সসৈন্য অগ্রসর হন ,যাতে উষ্ট্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বসরার বাইরে কুরাইযা নামক স্থানে ৩৬ হিজরির জমাদিউস সানি এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। । এ যুদ্ধে আলী (রা) জয়লাভ করেন । অতঃপর ৪০ জন সম্ভ্রান্ত মহিলাসহ একদল অনুচরের প্রহরাধিনে তিনি আয়েশা (রা) কে সসম্মানে মদিনায় প্রেরণ করেন । এদিকে মুয়াবিয়া বিরাট এক বাহিনি নিয়ে ফোরাতের তীরে উপনীত হন । আলী (রা) ফোরাত পাড়ি দিয়ে সিফফিন প্রান্তরে মুয়াবিয়া (রা) এর সম্মুখিন হন ।৩৬ হিজরীর যিলহজ্জ হতে ৩৭ হিজরির সফর পর্যন্ত পরপর কয়েকটি যুদ্ধ হয়। নলেজ প্রতিভাঃআলী (রা) ছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে পন্ডিত ব্যক্তি।স্বয়ং রাসুল (সা) বলেন আমি ইলমের শহর আর আলী (রা) সে নগরীর প্রবেশদ্বার ।তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক । তার রচিত দিওয়ানে আলী এবং তার বক্তব্য সমুহের সং!কলন নাহজুল বালাগা এর স্বাক্ষর বহন করে । তিনি একজন বড় ফিকহবিদও ছিলেন।
হাদিসশাসে্ এ তার অবদান ঃ হাদিসশাসে্ এ তার অবদান অপরিসিম । তিনি নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকার পরও সর্বমোট ৫৮৬ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন । তন্মধ্যে ২০ টির বর্ণনায় ইমাম বুখারি ও মুসলিম (র) একমত ।তাছাড়া ইমাম বুখারি স্বতন্ত নয়টি এবং ইমাম মুসলিম (র) পনেরটি হাদিস সংকলন করেন ।
গুণাবলিঃ তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন । ক্ষুধার যাতনা নিবারণের জন্য একখানা ভারি পাথর পেটে বেধে রেখে তিনি নিঃশেষে দান করতেন এবং অনুরুপ আত্ব নিগ্রহের মাধ্যমে কামনা বাসনা দমন করতেন ।পৃথিব ছিল তার নিকট ঘৃণিত । তিনি বলতেন দুনিয়া গলিত মাংস সদৃশ।সুতরাং দুনিয়ার মোহ কোন দিন তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে নি ।
শাহাদাত ঃ হিজরি ৪০ সনে ১৭/১৮ রমযান ফজরের সময় কূফায় আবদুর রহমান ইবনে মুলযিম নামক একজন খারেজি ঘাতক তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে এবং সে আঘাতের তিনদিন পর ইন্তেকাল করেন । ওফাতের সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর । কেউ কেউ বলেন ৬৫ বছর । কেউ কেউ বলেন ৭০ বছর । আবার কেউ বলেন ৫৮ বছর ।