হযরত মুহাম্মদ (স) এর নবুয়ত লাভের সাফল্য ,বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও সম্মান এবং প্রতিপওি লাভ প্রত্যক্ষ করে আরবের অনেক লোকের মনে নবুওয়াত লাভের ও প্রেরণা তীব্রভাবে জেগে উঠে ।জাগতিক -সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় তারা শুধু মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহন করে ,তারা কখনো ইসলামের সামাজিক ,রাজনৈতিক ও আধ্যাতিক মূল্যবোধকে মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি ।

মহািনবি (স) এর জীবনের শেষ দিকে আরবের বিভিন্ন অংশে কতিপয় ভন্ড নবির আর্বিভাব ঘটে। মহানবি (স) এর ওফাতের পর তারা বিদ্রোহি হয়ে ওঠে এবং ইসলামের ধ্বংস সাধনে লিপ্ত হয় ।যে সমস্ত ধর্মত্যাগি মুসলমান নিজেদেরকে নবি বলে দাবি করেন তাদের মধ্যে ইয়ামেনের আনসী গো েএর নেতা আসাদ আনসি ,ইয়ামামা বনু হানিফা গো েএর মুসায়লামা ,বনু আসাদ গো েএর তোলায়হা ,বানু ইয়ারবু গো ে েএর মহিলা সাজাহ ভন্ড নবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য । সংক্ষেপে ভন্ড নবিদের পরিচয় দেয়া হলঃ
আসাদ আনসি~_~
ভন্ড নবিদের মধ্যে ইয়ামেনের আনসি গো েএর নেতা আসাদ আনসি সর্বপ্রতম নবুওয়াত দাবি করে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাসূল (সা) এর জীবতাবস্থায় হিজরি দশম সালে সে নবুওয়াতের দাবিদার হয় । সে ইয়ামেন মুসলিম শাসনকর্তাকে বিতাড়িত ও হত্যা করে রাজধানী সানআ ও নাজরানে কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করে ।অতঃপর সে পার্শ্ববর্তি গোএ প্রধানদের সহায়তায় একটি শক্তিশালি সৈন্যবাহিনি গঠন করে এবং সমগ্র দক্ষিণ আরব সে দখলভুক্ত করে নেয়। মহানবি (স) এ বিদ্রোহ দমনের জন্যে হযরত সাদ বিন জাবালকে প্রেরণ করেন । কিন্ত ভন্ড নবি আসাদ মহানবি (স) এর মৃত্যুর দু-এক দিন পুর্বে ইয়ামেনের নিহত শাসনকর্তার এক আত্বিয় ফিরোজ দায়লামি কর্তৃক নিহত হয় । মহানবি (স) এর মৃত্যুর পর ইয়ামেনে পুনরায় বিদ্রোহ দেয় । প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) মুহাজির নেতৃত্বে বিদ্রোহদের ধ্বংস করে দেন।
মুসাইলামা-ঃ মধ্য আরবের ইয়ামামার বনু হানিফা গো ে েএর মুসাইলামা নিজেকে নবি বলে দাবি করে ।স্বরচিত বাণকে ঐশিবাণি বলে প্রচার করে নিজেকে নবি বলে প্রকাশ করে ।সে মহানবি (স) কে জানায় যে ,ধর্ম প্রচারে ও আরব উপদ্বীপ শাসন কার্য পরিচালনা ক্ষে েএ সে তার সমতুল্য ।মহানবি (সা)তাকে ভন্ডামি ,ধর্মদ্রোহিতা ও রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেন ।কেননা সে প্রতিনিধি আগমনের বর্ষে মহানবি (স) এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেছিল । কিন্তু ভন্ড মুসাইলামা মহানবি (স) এর নির্দেশে কর্ণপাত করেনি।বরং পবিএ কুরআনের বাণি নকল করে নিজস্ব পদ্ধতিতে নামায ব্যবস্থা চালু করে ।
তোলাইহাঃ
উওর আরবের বানু সাদ গো েএর তোলাইহা নামক এক ব্যক্তি নিজেকে নবি বলে দাবি করে ।মদিনার বেদুঈনদের সাথে কুচক্র করে সে যাকাত বিরোধী এক আন্দোলন গড়ে তোলে।মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) বুজাখার যুদ্ধে পরাজিত করেন ।ফলে সে পালিয়ে গিয়ে সিরিয়ায় আত্মগোপন করে ।খলিফা হযরত আবু বকর (রা) বানু সাদ গোএ কে ক্ষমা করে দেন। এ সুযোগে তোলাইহা ফিরে আসে এবং ইসলাম গ্রহন করে ।
সাজাহ ঃ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (র) হযরত ইকরামা ও সুরাহবিল কে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন । তারা এ যুদ্ধে মুসাইলামার বিরাট বাহিনীর কাছে পরাজিত হন । অতঃপর হযরত আবু বকর (রা) খালিদ বিন ওয়ালিদকে এ বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন । এ সময় মধ্য আরবের বনু ইয়ারবু গো েএর খ্রিস্টান রমনী সাজাহ মুসাইলামার সাথে যোগদান করে তাকে আরো শক্তিশালি করে তোলে । মহাবীর খালিদের সাথে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামামার যুদ্ধে সে অসংখ্য অনুচরসহ নিহত হয় । এ যুদ্ধে মুসলমানদের বহু কুরআনে হাফিজ সাহাবি শাহাদাত বরন করে ।
বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনিকে বিভক্তকরণঃ সমগ্র আরবে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে নব প্রতিষ্ঠিত শিশু ইসলামি সাম্রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । বিভিন্ন স্থানে তারা বিদ্রোহ করে যাকাত আদায় বন্ধ করে ,ধর্মিয় ও রাষ্ট্রিয় প্রতিনিধিদের হত্যা প্রভৃতি নাশকতামুলক কার্যক্রম চালায় । কৃ্ িএম ধর্ম প্রচারকদের প্ররোচনায় জনসাধারনের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারাতে থাকেন । আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ এবং ভন্ডনবীদের দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্র বিপন্ন হয়ে উঠে । তাদেরকে দমন করার উদ্দেশ্যে ও ভন্ডনবিদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে হযরত আবু বকর (রা) সেনাবাহিনিকে ১১টি ভাগে বিভক্ত করেন । প্রতিটি বিভাগে এক একজন সেনাপতি নিযুক্ত করেন । এরপর এক একটি দল আরবের বিভিন্ন অংশে পাঠান ।
১.মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রথমে তোলাইহা ও পরে মালিক বিন নুবাইবার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ।
২.হযরত ইকরামা বিন আবু জাহেল (রা) -কে মুসা্লামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয় ্হযরত সুরাহবিল (রা) হযরত ইকরামা (রা) এর সাহায্যার্থে পরে যোগ দিয়েছিলেন ।
৩.হযরত ইকরামা বিন আবু জাহেল (রা) -কে মুসাইলামাতুল কাযযাব এর বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয় । হযরত সুরাহবিল (র) হযরত ইকরামা (রা) এর সাহায্যার্থে পরে যোগ দিয়েছিলেন ।
৪.খলিফা আবু বকর (রা) আমর ইবনুল আসকে আরব ও সিরিয়া সীমান্তে ওয়াদীয়াহ এবং হাবিসের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ।
৫.খালিদ হযরত আবু বকর (রা) খালিদ ইবনে সাঈদকে স্থানীয় গোএসমুহ দমনে সিরিয়া পাঠান ।
৬.খলিফা আবু বকর (রা) আলা ইবনে হাজরামিকে আল হাতাম ইবনে দাবিয়ার বিরুদ্ধে বাহরাইন প্রেরণ করেন ।
৭.সুয়াইদ ইবনে মাকরানকে খলিফা আবু বকর (রা) ইযামেনের নিম্নাঞ্চলের বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরণ করেন।
৮.হযরত আরফাযাহ ইবনে হাযছামাকে লাকিত ইবনে মারিক আল আযদির বিরুদ্ধে মাহরায় প্রেরণ করা হয় ।
৯.খলিফা হযরত আবু বকর (রা) হুযায়ফা ইবনে মুহসিনকে বনু সালাম ও হাওয়াযিন গোএদ্বয়ের দমন করার জন্য প্রেরণ করেন ।
১০.হযরত তুরাইফাকে খলিফা হযরত আবু বকর (রা) আরবের নিম্নাঞ্চল অভিযানে প্রেরণ করেন।
১১.খলিফা হযরত আবু বকর (রা) সুরাহবিল ইবনে হাসনোহকে ইয়ামামায় ইকরামার সাথে প্রেরণ করেন ।
১২. মদিনাকে মক্কা করার নিমিওে একটি বাহিনীকে খলিফা তার সঙ্গে রাখেন। মদিনা হতে প্রধান সেনাপতিরুপে তিনি বিদ্রোহ দমন অভিযান দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে পরিচালনা করেন ।