হায়েযের মাসআলা

হায়েয 

আল্লাহ তায়ালা বলেন. তারা তোমাকে জিঙ্গেস করে :হায়েয সম্পর্কে ‍নির্দশ কি?তুমি বলো ,সেটা একটি  অপবিএ ও ময়লাযুক্ত  অবস্থা ।কাজেই তখন বউদের থেকে দুরে অবস্থান করবে েএবংতাদের কাছে গমন করবে না ,যতক্ষন না তারা পবিএ হয়। অতঃপর যখন তারা পবিএ হবে ,তখন তাদের নিকট গমন করবে ঠিক সেভাবে ,যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন । যারা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং পবিএতা  অবলম্বন করে ,আল্লাহ তাদের ভালবাসেন ।

(আল বাকারা ২২২)                                                                                       মহিলাদের বিশেষ অংগ থেকে তিন ধরনের রক্ত বের হয়ে থাকে ঃ

 এক সেই রক্ত ,যা অসুখ বিসুখ বা রোগের কারনে হয়ে থাকে । এ রক্ত সাধারণত ন’ বছর বয়সের আগে বের হয়,কিংবা এমন দিন বা বয়সে বের হয় যখন মাসিক বন্ধ হয়ে যায় ।এধরনের রক্তকে ইস্তিহাযা বা কুরক্ত বলা হয়। দুই,হায়েয,বা মাসিকের রক্ত । ‍

তিন নিফাসের রক্ত ।

হায়েয জিনিসটাকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে মেয়েদের প্রকৃতিগত করে দিয়েছেন ।নবী করিম (সা) তার একটি বাণিতে একথাটাই বলেছেন ।বনি ইসরাইলের লোকদের জন্য হায়েযের  যে বিধি বিধান ছিলো ,ইসলামের বিধি বিধান ও মাসআলা মাসায়েল তার চাইতে ভিন্ন ধরনের এবং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যর অধিকারি । ইমাম মুসলিম এবং ইমাম তিরমিযি হযরত আনাস (রা) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যে  ইহুদিরা রিতুবতিকে ঘর থেকে বের করে দিতো পানাহারের সময় তাদেরকে সাথে রাখতো না এবং তারা ঘরে একে অপরের সাথে থাকতে পারতো না ।  তারা হায়েযওয়ালা মহিলাদের সাথে পানাহার ও অবস্থান পরিত্যাগ করতে থাকে । এ প্রসঙ্গে যখন রাসুল (সা) কে প্রশ্ন করা হলো তখন এই  আয়াতটি নাযিল হয়।

এ আয়াতের ব্যাখায় রাসুল (স) বলেছেন,  ঋতুবতী সাথে সহবাস ছাড়া আর সবকিছুই জায়েজ।ইহুদীরা তার এই বক্তব্য জানতে পেরে বলে উঠলো: এই লোকটি চাই কি?  সে তো আমাদের রিতীনিতির কোনটিরও বিরোধিতা করতে বাদ দেয়নি।

হায়েয এর শাব্দিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া  এবং কেটে বের হওয়া  ,এ থেকেই আরবরা বলে থাকে হাদাস সাইল প্লাবন এসেছে ।সেখান থেকে পানি প্রবাহিত হয় বলেই সেটাকে হাউজ বলা হয়। সুতরাং রক্ত ফেটে বের হয় এবং প্রবাহিত হয় বলেই ঋতুকে হায়েয বলা হয় ।

শরীয়তের পরিভাষায় হায়েয মানে সেই রক্ত যা সুস্থাবস্থায় মেয়েদের বিশেষ অংগ থেকে নির্গত হয় ।যা কোন রোগ বা প্রসবের কারনে বের হয়না । যা বালিগ হবার পর থেকে বেরুতে আরম্ভ হয়ে থাকে ।আর বালিগ হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স নয় বছর । যা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে নিরাস হবার পূর্ব পর্যন্ত বের হয় । এ প্রসংগে বিভিন্ন মাযহাবের মতামত নিম্নে আলোচিত হলো । ন বছরের আগেই যদি রক্ত দেখা দেয়.,কিংবা সেই বয়সে  উপনীত হবার পরও যদি রক্ত দেখা দেয় ,যে বয়সে উপনীত হলে স্বাভাবিকভাবে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং সন্তান গর্ভধারনের ব্যপারে নারীরা নিরাশ হয়ে যায়,তবে সেটা ঋতুর রক্ত নয়,বরং তা কুরক্ত বা রোগজনিত রক্ত ।

নবী করিম (স) বলেছেন ,হায়েয গোটা নারী জাতীর একটি প্রকৃতিগত ব্যাপার ।একবার তিনি হজে যাবারকালে হযরত আয়েশাকে (রা)সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ।যাবারকালে তার মাসিক শুরু হয়ে যায় এবং আরাফার দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় তিনি কাঁদতে শুরু করেন ।নবী করিম (স)এসে দেখেন ,আয়েশা  কাঁদছেন।তিনি জানতে চাইলেন ,তুমি কাদছো কেন  ?
হযরত আয়েশা (রা) বললেন :লোকেরা উমরা করার পর ইহরাম খুলে নিয়েছে আর আমি এসব করা থেকে বঞ্চিত রয়েছি।সবাই তাওয়াফ করেছে ।আমি তাও করতে পারিনি ।এখন আরাফার দিন এসে গেছে অথচ আমি এই অবস্থায়।’’
রাসুলে করীম(স) বললেন ঃএটা মেয়েদের এক অপরিহার্য প্রাকৃতিক বিধান ।আল্লাহ তায়ালা  আদম কন্যাদের কপালে এটা লিখে দিয়েছেন ।সুতরাং তুমি উঠে গোসল করো এবং হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধে নাও । নারীদের ‍ঋতু হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার । কোনো কারনে কোন নারীর ঋতু না হলে সেটা তার জন্য অস্বাভাবিক বিষয় এবং দু’চার ক্ষে েএ এরকম অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে বলে চিকিৎসা বিঙ্গানীরাও স্বীকার করেছেন ।

হায়েযের সংঙ্গার ক্ষে েএ মতভেদঃ

হায়েযের সংঙ্গার ক্ষে েএ আলিমগণের মধ্যে নিম্নরুপ মতপার্থক্য রয়েছে ঃমালিকি মাযহাবের মতানুযায়ি যেসব মেয়ে বালিগ হবার কাছাকাছি পৌছেছে  অর্থাৎ যাদের বয়স ৯ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে ,তারা যদি রক্ত দেখে ,তবে তারা বয়স্ক মহিলাদের কাছ থেকে জেনে নেবে । কোনো বয়স্ক অভিঙ্গ মহিলা যদি এটাকে অকাট্যভাবে হায়েয বলে ,কিংবা কিছুটা সন্দেহ নিয়েও হায়েয বলে ,তবে এটাকে হায়েযই ধরতে হবে । তা না হলে কুরক্ত বা রোগের  রক্ত ধরে  নিতে হবে । অভিঙ্গ এবং বিশ্বস্ত ডাক্তারেরমতকেও বয়স্ক মহিলাদের মতের অনুরুপ ধরতে হবে ।

কিন্তু যদি ১৩থেকে ৫০বছরের মধ্যকার কোনো নারী রক্ত দেখতে শুরু করে ,তবে এটাকে অবশ্য হায়েযের রক্ত ধরতে হবে । যদি ৫০ থেকে ৭০বছরের মধ্যে কোনো নারী রক্ত দেখে ,তবে সেও অভিঙ্গ মহিলাদের কাছে জেনে নেবে ।কোন অভিঙ্গ  মহিলা তার সঠিক অভিঙ্গতার আলোকে যে সিদ্ধান্ত দেবে ,তাই মেনে নেবে । কিন্তু পূর্ণ সওর বছরের কোন মহিলার রক্ত দেখা দিলে তা যে হায়েয নয় , সে কথা অকাট্যভাবে ধরে নিতে হবে । এ ধরনের রক্তের নাম এস্তেহাযা।৯ বছরের পূর্বে কোনো মেয়ের রক্ত দেখা দিলে সেটাও এস্তেহাযা বা কুরক্ত ।

২.হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হলো ,৯বছরের মেয়ের রক্ত দেখা দিলে তা হায়েযেরই রক্ত । এরুপ মেয়ে রক্ত দেখার দিনগুলোতে নামায রোযা থেকে বিরত থাকবে । হায়েযের রক্ত সন্তান প্রসবের আশা থেকে নিরাশ হবার বয়স পর্যন্ত এসে থাকে । হানাফি মাযহাবের গৃহিত মতানুযায়ি সন্তান প্রসবের আশা থেকে নিরাশ হবার বয়স হলো পঞ্চান্ন বছর । সুতরাং পঞ্চান্ন বছর বয়সের পর যে রক্ত েদখা দেয় তা হায়েয নয়। অবশ্য পঞ্চান্নের পর কোনো মহিলা যদি একেবারে কালো কিংবা একেবারে টাটকা লাল রং -এর দেখে তবে সেটাকে হায়েয গণ্য করতে হবে ।

৩.হাম্বলি মাযহাবে সন্তান প্রসবের আশা থেকে নিরাশ হবার বয়স হলো পঞ্চাশ বছর ।সুতরাং এ বয়সের পর কোনো নারী রক্ত দেখলে সেটা হায়েয  নই ।

হায়েযের রক্ত হবার শর্তঃ

হায়েযের রক্তের জন্য পয়লা শর্ত হলো তা লাল ,হলদে কিংবা গাছলা (কালো এবং সাদার মাঝামাঝি ) রং -এর হতে হবে ।সুতরাং নিরেট সাদা জিনিস দেখলে তা হায়েয নয় ।

হানাফিরা কালো ,সবুজ এবং মেটে মেটে রংকে ও হায়েযের রক্তের রং -এর মধ্যে গণ্য করেছেন ।শাফেয়ীরা সেই সাথে কেবল কালো এবং লালচে হলুদ রং যোগ করেছেন ।

হায়েযের রক্ত হবার জন্য দ্বিতিয় শর্ত হলো মহিলাটি গর্ভবতি হবেনা । সুতরাং গর্ভবতীর রক্ত দেখা দিলে সেটাকে অসুখ জনিত রক্ত ধরে নিতে হবে ,ঋতুর রক্ত নয়। হায়েযের রক্ত হবার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হলো মহিলাটি গর্ভবতি হবে না ।সুতরাং গর্ভবতির রক্ত দেখা দিলে সেটাকে  অসুখ জনিত রক্ত ধরে নিতে হবে ,ঋতুর রক্ত নয় ।

হায়েযের রক্ত হবার জন্য আরেকটি শর্ত হলো ,রক্ত নির্গত হবার পূর্বে তুহুরের নূন্যতম সময়কাল পার হতে হবে ।

মালেকি এবং শাফেয়ীদের মতে গর্ভবতীর রক্ত দেখা দিলে সেটাও হায়েযের রক্ত হতে পারে ।সুতরাং তাদের মতে হায়েযের রক্ত দেখা দেবার জন্য গর্ভাশয় গর্ভাবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি নয় ।

Leave a Comment