হায়েযের মাসআলা

হায়েয শব্দের আভিধানিক অর্থ -রক্ত প্রবাহিত হওয়া, বিবির যৌনাঙ্গ দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব হওয়া। নির্গত রক্ত. পানি প্লাবিত হওয়া।    পারিভাষিক সংঙ্গাঃ

হায়েয হচ্ছে এমন রক্ত,যা প্রসবের কারণ ছাড়া গণগনতি কয়েকদিন যাবৎ সাবালিকা নারীর জরায়ুর গভীর থেকে তথা  ডিম্বকোষ থেকে  নিঃসরণ  হয়ে থাকে ।

যে রক্ত প্রতি মাসের নির্দীষ্ট কয়েক দিন নারীদের জরায়ু থেকে প্রবাহিত হয় ,তাকে হায়েয বলে ।                                                               বিশেষ মহিলার বিশেষ উৎস থেকে যে বিশেষ রক্ত দেখা যায় ,তাকে হায়েয বলে ।  বিশেষ মহিলার বিশেষ উৎস থেকে যে বিশেষ রক্ত দেখা যায় ,তাকে হায়েয বলে ।                                                          বিশেষ মহিলার বিশেষ উৎস  থেকে যে বিশেষ রক্ত দেখা যায় তাকে হায়েয বলে।                                                                              রোগ মুক্ত ও নাবালাকত্বের উর্ধের যুবতির জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে হায়েয বলে ।  যুবতি মহিলা  অশুচিকালে লাল ,হলুদ ও ঘোলাটে রঙের যে রক্ত প্রবাহ দেখে তাকে হায়েয বলে । ইমাম বুখারি  ইবনে মুনযির ও দাউদ যাহেরির মতে হায়েয অবস্থায় কুরআন  স্পর্শ না করে তেলাওয়াত করা জায়েজ ।                                       এতে বুঝা যায় রাসুল (সা) জুনুবি অবস্থায়ও যিকির  করতেন ।যদি জুনুবি অবস্থাতে যিকির জায়েজ হয় ,তবে হায়েয অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত জায়েয হবে না কেন ?কুরআন তেলাওয়াত জায়েজ হবে না  কেন ?কুরআন তেলাওয়াতও তো যিকির মাএ ।                              হায়েযের নিম্নতম ও উর্ধ্বতম সীমা নির্ণয় কারনে  ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে । যেমন –                               ইমাম মালেক (র) এর মতে হায়েযের নিম্নতম কোনো সীমা নেই ।ক্ষণকাল রক্ত নির্গত হলেও  তা হায়েযের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে । আর উর্ধবতম সীমা হচ্ছে ১৭ দিন ,মতান্তরে ১৮ দিন ।                                           ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (র)  এর মতে সর্বনিম্ন  সীমা  এক দিন এক রাত এবং উর্ধ সীমা ১৫ দিন ।                                                                                  ইমাম আবু ইউসুফ(র) এর মতে নিম্নতম  সীমা আড়াই দিন এবং সর্বোচ্চ সীমা  ১০দিন ।                                                              ইমাম আবু ইউসুফ (র) এর মতে নিম্নতম সীমা একদিন একরাত এবং উর্ধ্বসীমা ১৫দিন।                                                                           ইমাম আযম ও মুহাম্মদ (র) এর পক্ষ থেকে অন্যাদের জবাবঃ     ইবনে হুমাম বলেছেন ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (র) এর দাবির  অনুকুলে কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নেই ।                                                 *তাদের দাবিগুলো হাদিসের বিপরিত।আর হাদিসের বিপরিত কিয়াস গ্রহনীয় নয়।                                                                              হায়েযের সর্বনিম্ন মুদ্দত তিন দিন এবং সর্বোচ্চ মুদ্দত ১০দিন। এর কম- বেশি হলে তা হল রোগ।                                                      হায়েয অবস্থায় সঙ্গম করার হুকুম ঃ                               শাফেয়ী মতাবলাম্বিদের মতে হায়েয অবস্থায় বউসঙ্গম করা সকলের ঐকমত্যে হারাম । ইমাম শাফেয়ী ও তার মতাানুসারিরা বলেন ,এটাকে যে ব্যক্তি হালাল মনে করবে সে কাফির ।

২। তবে আহনাফ বলেন ,হায়েয অবস্থায়  বউসঙ্গম হারাম । কিন্তু কেউ এটাকে হালাল মনে করলে তাকে কাফির বলা যাবে না । কারন বউয়ের সাথে সঙ্গমের মৌলিক বিধান  হলো তা হালাল হওয়া, কিন্তু এটা জঘন্য কবিরা গুনাহ হবে । এর জন্যে ইস্তিগফার করতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে ।

উপভোগ করার বিধান ঃ                                                                              বউয়ের হায়েয অবস্থায়  যৌনাঙ্গদ্বার দিয়ে সঙ্গম  না করে বউয়ের যৌনাঙ্গ  আবৃত কাপড়ের  ওপর দিয়ে স্বামির উপভোগ করা জায়েজ ।যেমন হাদিসে এসেছে –         এক্ষেএ কাপড়ের ওপর দিয়ে উপভোগ করতে গেলে চরম মুহুর্তে মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা আছে বিধায় এরুপ প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকা উওম ।                                          ইচ্ছে করে বউ- যৌনাঙ্গ সঙ্গম করা । এটা সকলের ঐকমত্যে হারাম।   যৌনাঙ্গ বাদ দিয়ে নাভির উপরাঙ্গে এবং হাটুর নিম্নাঙ্গে উপভোগ করা । এটা সকলের ঐকমত্যে হালাল ।                                                                                                                       নাভি হতে হাটু পর্যন্ত অঙ্গের  সাথে উপভোগ করা ।এটা সকলের ঐকমত্যে হালাল ।      যৌনাঙ্গ ছাড়া নাভি  হতে হাটু পর্যন্ত অঙ্গের সাথে উপভোগ করা । ইমাম আহমদ বলেন ,এটা জায়েজ। তবে যৌনাঙ্গ থেকে বাঁচতে হবে । ইমাম মালেক ,শাফেয়ী ও আবু হানিফা (র) এর মতে  এটা নিঃশর্ত হারাম । কেননা চরম মুহুর্তে পদস্খলনের সম্ভাবনা আছে । কেউ কেউ বলেছেন ,স্বামি আত্বসংযমি হলে  এরুপ উপভোগ করা জায়েজ। তবে কারো মতে মাকরুহ তানযিহি হবে ,আবার কারো মতে মাকরুহে তাহরিমি হবে ।                                                                                                                             হায়েয অবস্থায় বউসঙ্গমের কাফফারা ঃ  সাঈদ ইবনে যুবাইর ও হাসান বসরি (র)  বলেন ,একটি ক্রিতদাস বা দাসী  আযাদ করতে হবে।                                                    একদল আলেমের মতে সদকা করতে হবে । অন্যদের মতে এক সদকা করতে হবে । এ পার্থক্যটা হায়েয এর তারতম্যের বিবেচনায় আচরিত হবে ।                                            ইমাম চতুষ্টয়ের মতে কাফফারা বলতে কিছু নেই ।ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করাই কাফের সদকার হাদিসটি মানসুখ হয়ে গেছে । তবে কিছু সদকা করা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।        হায়েযের রক্ত ধৌত করার হুকুম ঃ                                                                    ইমাম শাফেয়ী (র) এর  মতে,রক্ত বেশি হোক বা কম হোক,সর্বাবস্থায় তা ধৌত করা ওয়াজিব ।ধৌত করা ব্যতিত  ঐ কাপড় পরিধান করে নামায পড়লে সহিহ হবে না ।  ইমাম আবু হানিফা ,আহমদ ও সুফিয়ান  ছাওরি (র) এর মতে রক্ত সামান্য হলে ধৌত করা ওয়াজিব ।রক্ত কম-বেশি হওয়া পরিমাণনির্ভর ।অর্থাৎ রক্ত এক দিরহাম পরিমাণ হলে তাকে কম  এবং এক দিরহাম পরিমাণ হলে তাকে কম এবং এক দিরহাম হতে অধিক হলে তাকে বেশি ধরা হবে।                                                                       হায়েয অবস্থায় কুরআন তেলাওতের বিধান ঃ হায়েযা নারীর জন্যে কুরআন  তেলাওয়াত করা জায়েজ আছে কি-না ,এ ব্যপারে  ইমামদের মতানৈক্য রয়েছে ।যেমন – ইমাম বুখারি ,ইবনে মুনযির ,ও দাউদ যাহেরির মতে ,হায়েয অবস্থায় কুরআন স্পর্শ না করে তেলাওয়াত করা জায়েজ।                                                                                 ইমাম মালেক (র) থেকে  এ  ব্যাপারে দুটি অভিমত পাওয়া যায় । একটি  জায়েজের পক্ষে ,অন্যটির না জায়েজের পক্ষে।                                                                     এখানে উল্লেখ্য যে হায়েযের অবস্থায় –

এক  আয়াতের কম তেলাওয়াত করা জায়েজ ।

ইমাম নবভী (র) বলেন ,যে কোন কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পড়া জায়েজ।

ইমাম  আবু হানিফা (র) এর মতে ,দোয়া ও বরকত  হাদিসের উদ্দেশ্য মুখস্থ তেলাওয়াত কুরআন  জায়েজ।

মুস্তাহাযা নারীর প্রকারভেদঃ মুস্তাহাযা নারী নিম্নোক্ত তিন প্রকারের বিভক্ত-

১.প্রাথমিক অবস্থার মুস্তাহাযা।

২.অভ্যস্ত মুস্তাহাযা।

৩.দ্বিধাগ্রস্থ তথা ক্ষণে ক্ষণে অনিয়মিত রক্তস্রাবে আক্রান্ত মুস্তাহাযা             ঐ নারী যার জীবনের প্রথম হতেই  হায়েয শুরু হয়ে অনবরত রক্তস্রাব চালু রয়েছে ,তাকে মুবতাদা বলা হয়।  ঐ নারী যার প্রথমে স্বাভাবিকভাবে হায়েয চালু ছিলো। পরে তা অনিয়মিত হয়ে গেছে ।            হুকুমঃ এ নারী প্রথম ১০দিনকে হায়েয হিসেবে পালন করবে, এর পরের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করে নামায ও রোযা আদায় করবে ।                                                                 ঐ নারী যার  প্রথমে স্বাভাবিকভাবে হায়েয চালু ছিলো পরে তা অনিয়মিত হয়ে গেছে

রক্তস্রাব যদি পুর্ব  অভ্যাসগত ১০ দিনের চেয়ে কম হয় তাহলে ১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ।যদি ১০ দিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় ,তাহলে সমুদয় সময়কাল হায়েয হিসেবে গণ্য হবে । আর যদি ১০ দিনের পরেও  রক্তস্রাব চলতে থাকে ,তাহলে পূর্ব  অভ্যাসগত  দিনগুলোকে হায়েয বলে  এবং পরের দিনগুলোকে ইস্তিহাযা হিসেবে  গণ্য করবে । এমন নারী যার প্রথমত হায়েয স্বাভাবিক ছিল ।কিন্তু পরে অনিয়মিত রক্তস্রাব চালু হওয়ায় পূর্ব অভ্যাসগত নির্দিষ্ট সময় ভুলে গেছে । এ ধরনের নারী তিন প্রকার –                                                                  যে নারী অভ্যাসগত হায়েযের দিনের সংখ্যা ভুলে গেছে। এ নারী প্রথম তিন দিনকে হায়েয হিসেবে গণ্য করবে । পরবর্তিতে ১০ দিন পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের জন্যে গোসল করবে ।  অতঃপর মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের  জন্য গোসল করবে ।অতঃপর মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্যে অযু করবে ।                            যে নারী মাসের প্রথমে হায়েযা হতো ,না শেষ দিকে হায়েযা হতো ,তা ভুলে গেছে ।এ রকম নারী প্রথম ৫ দিন নতুন করে  অযু করে নামায পড়বে। এরপর ২৫দিন প্রত্যেক নামাযের জন্যে গোসল করবে ।

যে নারী  দিন-সংখ্যায় ও সময়কাল, উভয়টাতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে । এরুপ মহিলা প্রতিমাসে তিন দিন অযু করে নামায পড়বে ,বাকি২৭ দিন প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্যে গোসল করবে।

এমন নারী যে রক্তের বর্ণ দেখে স্বীয়  অভিঙ্গতা থেকে বুঝতে পারে যে ,কোনটি হায়েয এবং কোনটি  ইস্তিহাযা এরুপ মহিলা স্বীয়  অভিঙ্গতার ওপর  আমল করবে।

Leave a Comment