রোজার কাফফারা

রোজার কাফফারা সহবাসের সাথে নির্দীষ্ট কিনা,এ ব্যাপারে ইমামগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে ।যেমন-

শাফেয়ী ও আহমদের অভিমত ঃইমাম শাফেয়ী ও আহমদের (র) এর মতে রোযার কাফফারা সহবাসের সাথে নির্দীষ্ট।সুতরাং ইচ্ছা করে পানাহার করার কারণে কাফফারা আবশ্যক হবে না । কেননা পানাহার করার পর হয়তোবা সে তওবা করে নিতে পারে ।

অএ হাদীসে মহানবি (স) সহবাসের কারণে কাফফারার আদেশ দিয়েছেন । রাসুলের এ আদেশটি কেয়াসের বিপরীত। কারণ লোকটি তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে রাসুলের দরবারে  এসেছিল।

অন্য হাদিস থেকে ইরশাদ হয়েছে

গুনাহ থেকে তওবাকারীর অবস্থা হলো এমন যে তার কোনো গুনাহ নেই । তার পরেও রাসুল (সাঃ) লোকটিকে কাফফারা  আদায় করতে বলেছেন । মুলত এ আদেশটি  ছিল কেয়াসের বিপরীত । সুতরাং খেলাফে কেয়াসের ওপর ভিওি করে পানাহার ও কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার কারন,এ কথা বলা যাবে না ।

ইমাম আবু হানিফা ,মালেক ও সুফিয়ান সাওরী প্রমুখের মতে রোযার কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার কারন ,এ কথা বলা যাবে না ।

ইমাম আবু হানিফা ,মালেক ও সুফিয়ান সাওরি প্রমুখের মতেরোযার কাফফারা সহবাসের সাথে নিদিষ্ট নয় :বরং স্বেচ্ছায় পানাহারকারীর ওপরও কাফফারা ওয়াজিব হয়।

প্রশ্নোল্লিখিত হাদীসে কাফফারাকে শুধু সহবাসের সাথে নির্দীষ্ট করা হয়নি ; বরং পানাহার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যায় এবং ব্যক্তির উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়।  এমন  অনেক হাদীস বর্ণীত হয়েছে । সুতরাং সহবাসকেই কাফফারার জন্য নির্দীষ্ট মনে করা ঠিক নয়।

তারা প্রশ্নোল্লিখিত হাদীসকে কেয়াসবিরোধী  বলেছেন ।আসলে  তা কেয়াসবিরোধী নয় :বরং কেয়াসসম্মত । আলোচ্য হাদীসে ক্রিতদাস  আযাদ করাকেও  রোযার কাফফারা হিসেবে  উল্লেখ করা হয়েছে ।এ থেকে প্রমাণিত হলো শুধু তওবাই গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট নয় ;

বরং কাফফারা ও ব্যবস্থা আছে । অন্যায়ের জরিমানা হওয়া বিবেকের ও দাবি । অধিকন্ত পানাহারের কারনে কাফফারা ওয়াজিব হবে । কারন রোযা  অবস্থায় স্বভাবগতভাবেই কানাপিনার দিকে মন ঝুকে থাকে । তা থেকে বিরত থাকাটা  সহবাস থেকে বিরত থাকার চেয়েও  কষ্টকর। সুতরাং খানাপিনার দিকে মন ঝুকে থাকে । তা থেকে বিরত থাকাটা সহবাস থেকে বিরত থাকার চেয়েও কষ্টকর । সুতরাং খানাপিনার চেয়ে কাফফারা ওয়াজিব যুক্তিসঙ্গত ।

রোযা থাকা অবস্থায়  রমযানের বিধি লঙ্ঘনের কারনে রোযাদারের  ওপর অতিরিক্ত জরিমানা স্বরুপ যে কার্য সম্পাদন করতে হয় ,তাকে রোযার কাফফারা বলে । সুতরাং রোযার কাফফারা পরিমাণ নির্ণয়ে ইমামদের মাঝে নিম্নোক্ত মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয় ।যেমন-

মালেক ও শাফেয়ীদের অভিমত ঃ
ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (র) এর মতে প্রত্যেক মিসকিনকে এক সা এর চারভাগের এক ভাগ দিতে হবে । এ হিসেবে ৬০ জন মিসকিনকে মোট ১৫সা দিতে হবে । যার বর্তমান ওজন ১ মণ সাড়ে ১২ সের গম।
আহনাফের অভিমতঃ 
ইমাম আবু হানীফা (র) এর মতে প্রত্যেক মিসকিনকে  অর্ধ সা  দিতে হবে । এ হিসেবে ৬০জন মিসকিনকে সর্বমোট ৩০ সা দিতে হবে । যার বর্তমান ওজন ২ মণ ২৫ সের গম। মালেক ও শাফেয়ীর প্রত্যুওর
আগুন্তক লোকটিকে  অর্থনৈতীক  দিক থেকে  অভাবী হওয়ায় প্রথমিকভাবে তাকে এক ইরক বা বড় ধরনের এক ঝুড়ি খেজুরগুলো  কাফফারা হিসেবে  আদায় করার জন্য দেয়া হয়নি ;বরং তা দেয়া হয়েছে  তার পরিবারের খরচের জন্য । এগুলো তুমি তোমার পরিবারের লোকদেরকেই খেতে দাও ।
অক্ষমতার কারণে কাফফারা রহিত হবে কিনা ?

অক্ষমতার কারনে কাফফারা রহিত হবে কিনা ,িএ ব্যাপারে ইমামগনের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয় ।  ইমাম আবু হানিফা  ও শাফেয়ী (র)  এর মতে অক্ষমতা ও দরিদ্রতা কাফফারা রহিত হবে কিনা ,এ ব্যপারে ইমামগণের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয় । ইমাম আবু হানিফা ও শাফেয়ী(র)  এর মতে,অক্ষমতা ও দরিদ্রতা কাফফারা রহিত করে না :বরং পরবর্তিতে আদায় করতে হবে । তাদের দলিল হলো আবু হোরায়রা বর্ণিত উল্লিখিত হাদিস ।

তাদের দৃষ্টিতে  আলোচ্য  হাদিসটি কাফফারা রহিতকারী নয় ;বরং কাফফারা অনাদায়ী থেকে যাবে ।কেননা অক্ষমতা যদি কাফফারা রহিতকারী হতো তাহলে রাসুল (সা) তাকে কাফফারা স্বরুপ খেজুরগুলো সদকা করার নির্দেশ দিতেন না । কিন্তু পরে সে স্বীয় পরিবারের অভাবের কথা জানালে রাসুল তার পরিবারের খাওয়ার অনুমতি দিলেন।কিন্ত কাফফারা রহিত হওয়ার কথা বলেননি । কোন বস্তুর উল্লেখ  না করা ,তা বাস্তবে না হওয়াকে  আবশ্যক করে না ।ইমাম যুরকানি (র) এ মতটি সমর্থন করেছেন।

জমহুরের অভিমত ঃ   জমহুর আলেমগণ বলেন,অক্ষমতার কারনে কাফফারা রহিত হয়ে যায় না :বরং আর্থিক সচ্ছলতা লাভ করা পর্যন্ত তার জন্য অবকাশ  রয়েছে । কিন্ত সচ্ছলতা লাভের সাথে সাথেই তাকে কাফফারা  আদায় করতে হবে ।
    আহমদ ও  আওযায়ীর অভিমত ঃ ইমাম আহমদ ও আওযায়ী (র) এর মতে –
অক্ষমতার কারণে কাফফারা রহিত হয়ে যায় । পরবর্তিতে সে যদি সক্ষমতা ফিরে পায় তবুও তার ওপর কাফফারা আদায় ওয়াজিব হবে না ।
দলীলঃ আবু হোরাইরা (রা) এর হাদিস । আলোচ্য হাদিসে লোকটির অক্ষমতার কারণে রাসুল (সা) তার কাফফারার খেজুরগুলো  নিজ পরিবারেই ব্যয় করার নির্দেশ দিলেন। পরবর্তিতে তার কাফফারা আদায়ের ক্ষমতা ফিরে আসলে  তাকে আর কাফফারা  আদায়ের নির্দেশ দেয়নি । এতে প্রমাণিত হয় ,অক্ষমতা কাফফারা রহিত করে ।

যুহুরির অভিমত ঃ

ইমাম যুহুরি (র) বলেন ,সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও বিধানটি  উক্ত ব্যক্তির সাথে খাস বা সংশ্লিষ্ট ।সুতরাং অন্য কারো জন্য  এ বিধান প্রযোজ্য নয়।

Leave a Comment