সূরা ফাতহ আয়াত ১-২

নিশ্চয় আমি আপনাকে বিজয় দান করেছি ,যা সুস্পষ্ট ।যাতে আল্লাহ আপনার অতিত ও ভবিষ্যতে এূটিসমুহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।                                        আনাস (রা) বলেন মুসলমানগণ হুদায়বিয়ার ময়দানে বাহ্যতপরাজয়মূলক সন্ধি  এবং উমরা না করেই মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হন । এটি ছিল  আমাদের সকল সাহাবিদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক । আমাদেরকে ক্লেদ ,বিষন্নতা ও হতাশা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল । এই অবস্থার প্রেক্ষিতে  আয়াতটি নাযিল হয়। আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর রাসুল (সা) বলেন ,আমার ওপর এমন একটি সূরা নাযিল হয়েছে ,যা আমার নিকট দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতিয় বস্তুর চেয়ে অধিক প্রিয়। ইবনে আব্বাস (র)বলেন আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর ইহুদিরা রাসুল (সা) সাহাবাগণকে গালমন্দ করতে লাগল , আমরা এমন ব্যক্তির কেন অনুসরণ করব,যার নিজের অবস্থা কি হবে সেটাই জানা নেই ! তাদের  এসব কথোপকথন  নবজিকে ভীষণ পীড়া দিল।তখন নবিজীকে সুসংবাদ ও সান্তনা প্রদানের জন্য  আয়াত দুটি নাযিল হয়। তিনি মুমিনদের অন্তরে  প্রশান্তি নাযিল করেন ,যাতে তাদের ঈমানের সাথে  আরও ঈমান বেড়ে যায় । নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের  বাহিনীসমুহ  আল্লাহরই  এবং  আল্লাহ সর্বঙ্গ প্রঙ্গাময়।            পূর্বের আয়াতসমুহে নবিজিকে সাহায্য করার মাধ্যমে  তার মর্য াদা ওশান  উল্লেখ করা হয়েছে ।

এরই মুনাসাবাতে আলোচ্য আয়াতে তার সাহাবিগণের মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।সুতরাং প্রথম  আয়াতগুলোতে নবিজির মর্যাদা  এবং আলোচ্য আয়াতে তার সাহাবিগণের মর্যাদার কথা উল্লেখ থাকাই পূর্বের আয়াতের সাথে যোগসুএ রয়েছে।

ঈমান এজন্য বেড়ে যায় ,যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার  নারীিদেরকে জান্নাত প্রবেশ করান ,যার তলদেশে নদী প্রবাহিত । সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে এবং যাতে তিনি তাদের পাপ মোচন করেন । এটাই আল্লাহর কাছে মহাসাফল্য।  সূরা ফাতহর আয়াতটি নাজিল হয় এবং কেয়ামত দিবসে  তার প্রতি রহমত ও নেয়ামত দ্বারা পরিব্যাপ্ত করা হবে বলে সুসংবাদ প্রদান করা হয় । এই আয়াত নাযিল হলে সাহাবাগণ  এসে বললেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ  আল্লাহ তায়ালা আপনার সঙ্গে কিরুপ আচরণ করবেন তা জানতে পারলাম ।         কিন্তু আমাদের সাথে কিরুপ আচরণ করবেন তাতো জানি না । তখন  আয়াতটি নাজিল হলো  এবং তাদেরকেও জান্নাতের  সুসংবাদ প্রদান করা হলো ।   অন্ধের জন্যে,খন্জের জন্য ও রুগ্নের জন্যে কোনো  অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ তার  রাসুলের  আনুগত্য করবে  তাকে তিনি জান্নাত দাখিল করবেন ,যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয় । পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে ,তাকে কষ্টদায়ক শাস্তি দিবেন ।                           জায়েদ বিন সাবেত (রা) বলেন  আমি রাসুল (সা) এর আদেশে ওহি লিখতাম।যখন জিহাদের আদেশ করা হলো ,তখন আমার কলম ছিল আমার কানে ঝুলানো ।                                                        সেই সময় এক অন্ধ ব্যক্তি রাসুল (সা)কে  বলল ,ইয়া রাসুলুল্লাহ  আমি তো অন্ধ মানুষ ,আমার ব্যপারে হুকুম কি? তার এই প্রশ্নের জবাবে এই আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয় ।                 কেউ কেউ বলেন  আয়াতটি মুসলমানদের সাথে  অন্ধ,লেংড়া ,অসুস্থ,পঙ্গু ও অন্যান্য প্রতিবন্ধি হওয়ার কারনে সুস্থ লোকেরা  এদের মালে খেয়ানত করবে কিংবা তাদের খানা কম হবে বলে আশঙ্কা ছিল । পরবর্তি  এই  আয়াত দ্বারা  সেই  নিষেধাঙ্গা উঠিয়ে নেয়া হয়।  আল্লাহ মুমিনদের  প্রতি সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষের নীচে  আপনার  কাছে শপথ করল । আল্লাহ অবগত  ছিলেন যা তাদের অন্তরে  ছিল ।  অতঃপর তিনি তাদের  প্রতি প্রশান্তি নাজিল করলেন  এবং তাদেরকে  আসন্ন বিজয় পুরষ্কার  দিলেন ।                                                           সালামা ইবনে  আকওয়া(রা) বলেন ,হুদায়বিয়ার সময় কুরাইশরা খারেজা  ইবনে কুরজ নামক ব্যক্তিকে গোয়েন্দা  হিসেবে প্রেরণ করল ।তিনিও নবিজির প্রশংসা করতে করতে ফিরে গেলেন ।কুরাইশরা তখন খারেজার  প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে বলল ,তুমি একজন বেদুঈণ  ব্যক্তি,তাই মুহাম্মদ(সা)  কি বলেছেন  তা যথাযথভাবে উপলব্ধি  না করেই তার প্রশংসা করতে করতে মক্কাবাসীর কাছে ফিরে গেলেন । মুসলমানদের এই প্রশংসা সহ্য করতে না পেরে  মক্কায় কুরাইশদের হাতে যেসব মুসলমান বন্দি ছিলেন কুরাইশরা তাদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দিল।  এই তথ্য জানতে পেরে রাসুল (স) ওমর *(র) কে বললেন তুমি কি মক্কায় গিয়ে মুসলমানদের নিকট  আমার সংবাদ পৌছাতে পারবে ? উমর (রা) বললেন ,পারব ।তবে মক্কায় আমার কোন আত্মিয় নেই । যে আমাকে কুরাইশদের আক্রমন থেকে রক্ষা করবে । একথা বলার পর ওসমান (রা) কে মক্কায় পাঠানো হলো ।মক্কার কুরাইশরা উসমান (রা)  কে নানা রকম কুটুক্তিমুলক কথা বলল । তবে তাকে শারিরিকভাবে নির্যাতনকরা থেকে বিরত থাকল ।আর আবান ইবনে সাঈদ  ইবনে আস নামের ব্যক্তি তাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিলেন । এরপর উসমান (রা) মক্কায় ঘুরে ঘুরে  প্রত্যেক মুসলমানের নিকট নবজির পয়গাম পৌছাতে লাগলেন । সালামা ইবনে  আকওয়া(রা) বলেন  এই ঘটনা প্রবাহ চলছিল,হঠাৎ একজন ঘোষক ঘোষনা করলেন , হে লোক সকল বায়আত !বায়আত!জিবরাঈল আমিন (আ) বায়আতের পয়গাম নিয়ে  অবতরণ করেছেন ।  এই ঘটনা শোনার পর আমরা  দিকে ছুটে গেলাম তিনি বাবলা বৃক্ষের নিচে আরাম করছিলেন ।আমরা তখন হস্তমোবারক  বায়আত হলাম  এবং জীবন থাকা পর্যন্ত পলায়ন না করার প্রতিঙ্গা করলাআমাদের এই বাইয়াত প্রসঙ্গেই তখন  আয়াতটি  নাজিল হলো ।

Leave a Comment