কেবলা নির্ধারণ পদ্ধতি

নামাযের শর্তসমুহের একটি হলো কেবলামুখি হয়ে নামায আদায় করা ।এটা একটি ব্যপক বিধান যা সারা দুনিয়ার সকল মানুষ(তথা শহরবাসী.গ্রামবাসী ও মক্কার কাছে বা দূরে অবস্থিত সকলের জন্যই)ফরয।তবে দূরে বসবাস করার কারণে কাবাগৃহ যাদের চোখের সামনে নেই তারা কাবাগৃহ কিংবা মসজিদে হারামের দিকে মুখ করলেই চলবে।তাই দূরবর্তীদের উপর কেবলা নির্ণয় করা অপরিহার্য বিষয়।এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা পেশ করা হলো।

নামাযে কেবলা সামনে রাখার গুরুত্বঃ                                                                যে ব্যক্তি কাবা শরীফকে সামনে রেখে নামায আদায় করতে সক্ষম তার জন্যে ফরয হলো স্বয়ং কাবা শরীফকে সামনে রেখে নামায আদায় করা ।আল্লাহ তায়ালা  রাসুলুল্লাহ  কে সম্বোধন করে বলেন –                                                           এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন। এবং তোমরা যেখানেই থাক সে দিকে মুখ কর।                                                                                                       রাসুলুল্লাহ যখন বাইতুল্লাহ ভেতর প্রবেশ করলেন বাইতুল্লাহর চতুর্দিকে দুআ করলেন এবং নামায না পড়ে বেরিয়ে যান। এরপর কাবাকে সামনে রেখে দুই রাকাআত নামায আদায় করে বলেন ,এটাই কেবলা ।                                              রাসুলুল্লাহ বলেছেন কেবলামুখি হও এবং তাকবীর বলো।                                         যারা মক্কায় থাকবে তাদের জন্য ফরয হলো স্বয়ং কাবা শরীফকে সামনে নিয়ে নামায আদায় করা।                                                                                                    দূরবর্তিদের ক্ষে েএ কেবলা নির্ণয়ঃ                                                                যারা দূরবর্তি শহর বা গ্রামে অবস্থান করে ,বায়তুল্লাহ দেখতে পায় না তাদের জন্য বিধান হলো.কমপক্ষে কেবলার দিক নির্ণয় করে সে দিকে দাড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। নিম্নে দিক নির্ণয় সম্পর্কে কিছূ আলোচনা করা হলো।  মূল আলোচনার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন যে ,শরীয়তের সকল হুকুমের ভিওি সহজতার উপর।                                                                                                         আল্লাহ তাআলা কোনো ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের বাহিরে কোনো কিছু আরোপিত করেন না।                                                                                                উল্লিখিত আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে.শরীআতের সকল বিধান মানুষের সাধ্যের ভেতর ।আর নামায.রোজা আল্লাহ তাআলার এমন হুকুম যা সুস্থমস্তিস্ক প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানের উপর ফরয। সে যেখানেই (অর্থাৎ শহর,গ্রাম,পাহাড়-পর্বত,মরুভুমি বা সমুদ্র – সৈকতে) বসবাস করুক । তাই আল্লাহ তাআলা নামায ও রোযার সময়ের ভিওি সূর্যের উদয়,অস্ত ও  সূর্যের ছায়া পরবর্তি লালিমা ইত্যাদি সহজ ও বাহ্যিক নিদর্শনের উপর রেখেছেন।                    অতএব যারা সরাসরি বাইতুল্লাহ দেখতে পান না তাদের জন্য সরাসরি কেবলা না হলেও কেবলার দিক সামনে থাকতে হবে। এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে কেবলার দিক কিভাবে নির্ণয় করা হবে । এক্ষে  েএ আমরা সর্বপ্রথম দেখবো যে,সাহাবায়ে কেরাম দুর দুরান্ত দ্বীন প্রচারের জন্য সফর করেছেন এবং অনেক সাহাবি বিভিন্ন দেশে বাসস্থান ও করেছেন। সর্বোপরি রাসুল দুর দেশে জিহাদ করতে যেতেন।তখন তারা কেবলা নির্ণয়ের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন দূরবর্তি যে কোন ব্যক্তির জন্য তা হবে আদর্শ ও অনুসরণীয়।হাদিস এবং আছারে সাহাবা থেকে বুঝা যায় যে ,তারা কেবলা নির্ণয় করতেন ‘তাহাররী- (অনুমান) করে ।আর এতটুকু ‍সুবিধা কুরআন থেকেও অনুধাবণ করা যায় । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-                                                                                                                         এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন। এবং তোমরা যেখানেই থাক সে দিকে মুখ কর। উক্ত আয়াতে কাবা  অথবা বাইতুল্লাহ বলার পরিবর্তে মসজিদে হারাম বলে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ,দূরবর্তি দেশসমুহে বসবাসকারীদের পক্ষে হুবহু কাবাগৃহ বরাবর

দদাড়ানো জরুরি নয়।বরং পূর্ব- পশ্চিম.উওর -দক্ষিণের মধ্যে থেকে যেদিকে কাবা অবস্থিত সেদিকে মুখ করলেই যথেষ্ট হবে।

আমরা রাসুল এর সাথে অন্ধকার রাতে সফররত ছিলাম ।আমাদের কারো কেবলার দিক জানা ছিলো না বিধায় প্রত্যেক নিজ অনুমান অনুযায়ী নামায আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর ভোরে বিষয়টি রাসুলুল্লাহ কে জানালে (কুরআনের এই আয়াত )অবতীর্ণ হয় ’ তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ আছেন।                                                                                                          মসজিদে নববি ব্যতিত দুনিয়ার সকল মেহরাব বা মসজিদে অনুমানের ‍উপর ভিওি করে নির্মান করা হয়েছে, এমনকি মিনার মসজিদও। কেননা রাসুলুল্লাহ মুজেযা স্বরুপ বাইতুল্লাহকে দেখে মসজিদে নববির ভিওি স্থাপন করেছেন । জমহুরে উম্মত এ বিষয়ে একমত যে দুনিয়ার সকল মসজিদের কেবলার দিক চিন্তা ভাবনা ও অনুমানের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে মসজিদে নববি ব্যতিত । কারণ তা স্থাপন করার সময় আল্লাহ তাআলা বাইতুল্লাহকে রাসুল এর সামনে রেখেছেন মুজেযা স্বরুপ। রাসুল তা দেখে মসজিদে নববির ভিওি স্থাপন করেছেন।                                                                                                                    হযরত ওমর রাযি এর শাসনামলে সকল ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রত্যেক শাখার গভর্নরের নিকট  তিনি এই মর্মে ফরমান পাঠালেন যে ,প্রতিটি শাখায় যেন মসজিদ নির্মান করা হয়।সরকারি কর্মকর্তাগণ তার নির্দেশ  অনুযায়ী কাজ করলেন।কিন্তু কেবলার দিক নির্ণয়ের জন্য হযরত উমর রাযি বা গভর্নররা যনেএর ব্যবস্থা করেননি এবং কোনো অংকশাস্‌এও ব্যবহার করেননি।                  কাবার দিক নির্ণয় করা যায় নিদর্শন বা দলিলের মাধ্যমে ।আর শহর ও গ্রামে (কেবলার দিক নির্ণয়ের) নিদর্শন হলো সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের নির্মিত মেহরাব বা  মসজিদ সমুহ। সুতরাং তাদের অনুসরণ আমাদের জন্য অপরিহার্য। কাবার দিক নির্ণয় করা যায় নিদর্শন বা দলীলের মাধ্যমে ।আর শহর ও গ্রামে (কেবলার দিক নির্ণয়ের) নিদর্শন হলো সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের নির্মিত মেহরাব বা মসজিদ সমুহ।সুতরাং তাদের অনুসরণ আমাদের জন্য অপরিহার্য।

আর কাবা শরীফ বা কেবলার দিক চেনা যায় নিদর্শনের মাধ্যমে ।সুতরাং আমাদের উপর পূর্ববর্তীদের নির্মিত মেহরাব সমুহকে সামনে রেখে তাদের অনুসরণ করা আবশ্যক ।                                                                                           নফল নামায যদি উট বা সাওয়ারীতে আদায় করা হয় তাহলে বিষয়টি আরো সহজ ।কারণ তখন কেবলার দিকে সোজা হয়ে নামায শুরু করার পর কেবলার দিক ঠিক রাখা জরুরি নয় বরং সাওয়ারী যেদিকে ঘুরে যাক না কেনো ,নামায নষ্ট হবে না।                                                                                                                        হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি বর্ণনা করেন-                                                     রাসুলুল্লাহ সাওয়ারীতে আরোহণ অবস্থায় নামায আদায় করতেন,সাওয়ারী যেদিকেই ঘুরে থাক না কেন। তবে ফরয নামায আদায়ের জন্য সাওয়ারী থেকে নেমে কিবলামুখি হয়ে দাড়াতেন।                                                                              বলাবাহুল্য যে তাহারবী বা অনুমান নিশ্চয় কোনো না কোন একটি আলামত নির্ভর হবে। যেমন সূর্য,চন্দ্র বা তারকা অথবা আরো যা কিছু আলামত হওয়ার উপযুক্ত তা কেবলা  নির্ণয়ের ক্ষে েএ ব্যবহার করা যেতে পারে ।কতটুকুর মাঝে থাকলে একজন ব্যক্তিকে বলা যাবে সে কেবলার দিকে আছে তা সহজে বোঝার জন্য নিম্নে ডিগ্রির হিসাব তুলে ধরা হলো।                                                                   ডিগ্রির পরিচয়                                                                                                  ডিগ্রি বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে স্মরণ রাখতে হবে ,পৃথীবীর মৌলিক দিক চারটি। উওর, দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম।এই দিকগুলোর আয়তন ও পরিধি নির্ণয় করার জন্য একটি গোল বৃও আকা হয়।এই বৃওের চারিদিকের মাঝের স্থান নির্ণয়ের জন্য দুটি রেখা টান হয়। একটিকে বিষুব রেখা’ ও অন্যটিকে গ্রিনিচ রেখা বলা হয়। উওর ও দক্ষিণের মাঝের স্থান নির্ণয়ের জন্য মাঝ বরাবর  যে কল্পিত রেখা টানা হয়,তাকে বিষুব রেখা বলে। আর পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝামাঝি অঞ্চল নির্ণয়ের জন্য যে রেখা টানা হয় তাকে গ্রিনিচ রেখা বলে ।                           বৃওের ডান পাশের দিক হলো উওর ।উওর দিকের মূল কেন্দ্রকে ০ডিগ্রি থেকে পূর্ব দিকের মূল কেন্দ্র পর্যন্ত ৯০ ডিগ্রি হলো পূর্ব দিকের মুল কেন্দ্র।                       এমনিভাবে পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ দিক পর্যন্ত ৯০ ডিগ্রি হবে।তাহলে ১৮০+৯০=২৭০ হলো পশ্চিম দিকের মূল কেন্দ্র। এই ২৭০ ডিগ্রিই হলো আমাদের জন্য মূল কেবলা।আর এই পশ্চিম দিক থেকে উওর পর্যন্ত ৯০ ডিগ্রি হবে ।সুতরাং ২৭০ডিগ্রি+৯০ ডিগ্রি=৩৬০ ডিগ্রি হলো পৃথিবির মূল আয়তন।  আমরা দেখতে পেলাম পাশাপাশি দুদিকের মাঝে দুরত্ব হলো ৯০ ডিগ্রি।এই ৯০ ডিগ্রির অর্ধেক তথা ৪৫ ডিগ্রি পশ্চিমের অংশ ও বাকি ৪৫ ডিগ্রি উওরের অংশ। আর প্রত্যেক দিকের এই ৪৫ ডিগ্রি পরিমাণ স্থান  ঐ দিকের  জিহাত বলে  বিবেচিত হবে।                                                                                                             সর্বোপরি পশ্চিম তথা ২৭০ ডিগ্রি হলো আমাদের মুল কেবলা ।আর ২৭০ ডিগ্রির উভয় পাশের ৪৫+৪৫=৯০ ডিগ্রি হলো জিহাতে কেবলা ।এই জিহাতে কেবলা। এই জিহাতে কেবলার ভিতরে যে কোনো দিকে  নামায পড়া বৈধ হবে।   যাই হোক ,কোন মুসল্লি যদি কেবলার দু পাশের ৪৫+৪৫=৯০ ডিগ্রির ভিতরে থাকে ,তাহলে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে । আর যদি ৯০ ডিগ্রির বাইরে চলে যায়,তাহলে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে । ৯০ ডিগ্রির ভিতরে  বা বাইরে থাকার একটি চিএ।                                                                                                      ধ্রুব তারকার মাধ্যমে কেবলা নির্ণয় করে  যে মসজিদগুলোর মিহরাব স্থির করা হয়েছে তা যদি জিহাতে কেবলার ভেতরে থাকে তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে । এক্ষে েএ আধুনিক কম্পাসের হিসেব দেখিয়ে ঝগড়া বা বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয় । হা যদি  জিহাতে কেবলার  বাহিরে চলে যাওয়া হয় তখন সংশোধন করতে হবে।                             ধ্রুব তারকার মাধ্যমে কেবলা নির্ণয় করে যে মসজিদগুলোর মিহরাব স্থির করা হয়েছে তা যদি জিহাতে কেবলার ভেতরে থাকে তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। এক্ষে েএ আধুনিক কম্পাসের হিসেব দেখিয়ে ঝগড়া বা বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়। হা যদি জিহাতে কেবলার বাহিরে চলে যাওয়া হয় তখন সংশোধন করতে হবে।                               বর্তমানে বিভিন্ন কম্পাস দিয়েও কেবলা নির্ধারণ করা যায় ।কারণ কম্পাসে কোনো এক দিক নির্ধারণ করা হলে অন্য সবদিকও নির্ধারণ হয়ে যায় ।কম্পাসে মূলত উওর দিক নির্ধারিত থাকে ।কারণ পৃথিবির উওর মেরুতে লৌহকর্ষক চুম্বকীয় শক্তি আছে। সুতরাং কম্পাস দিয়ে উওর দিক নির্ধারণ করা হলে পশ্চিম দিকও নির্ধারিত হয়ে যায়।                                               ইন্টারন্যাশনাল শিপে ব্যবহ্রত জাইরো কম্পাস  ব্যতিত অন্য কম্পাস দ্বারা কেবলা নির্ণয়ের ক্ষে েএ আমাদের স্মরণ রাখতে হবে,কম্পাস ম্যগটেনিক হওয়ার কারণে  প্রকৃত ভৌগলিক  উওর দিক প্রদর্শিত না হয়ে চৌম্বক উওর দিক প্রদর্শিত হয়। আর চৌম্বক  উওর দিক ও  ভৌগলিক উওর  দিকের মাঝে  কিছুটা পার্থক্য আছে। তাই কম্পাস দিয়ে প্রথমে চৌম্বক  উওর নির্ণয়  করতে হবে । এরপর চৌম্বক উওর থেকে ভৌগলিক উওর বের করতে হবে।                                                         অতঃপর ভৌগলিক  উওর থেকে আইনে কেবলা ও জিহাতে কেবলা নির্ণ য় করতে হবে।

পাহাড়-পর্বত,সমুদ্র ও মরুভুমিতে কেবলা নির্ধারণঃ                                      এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কথা হলো নীতিকথা,যেখানে পুরোনো মসজিদ নেই যেমন সমুদ্র মরুভুমিতে সেখানে চন্দ্র,সূর্য ও তারকা ইত্যাদি প্রসিদ্ধ নিদর্শ নের মাধ্যমে কেবলা নির্ধা রণ করবে । এটা সাহাবা তাবেয়ী ও সালাফে সালেহীনের পদ্ধতি। এমনকি চন্দ্র সূর্যকে নিদর্শন হিসেবে ব্যবহারের  কথা কুরআনে উল্লেখ হয়েছে । যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ  করেন –                                                                                                   তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষএপুন্জ সৃজন করেছেন -যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে  পথ প্রাপ্ত হও।                                                                  সাগরে মরুভুমিতে কেবলার নিদর্শন হচ্ছে তারকারাজি ।তাই ওমর রাযি,থেকে বর্ণিত তিনি বলেন তোমরা তারকাশাস্‌ এ শিক্ষা গ্রহণ কর, যার দ্বারা তোমরা কেবলার দিক সম্পর্কে জানতে পারবে ।                          তারকারাজির মধ্যে যে তারকাটির মাধ্যমে সহজে কেবলা  নির্ধারণ করা যায় তা হলো ধ্রুবতারা ।  এই তারকাটি পুরো  আকাশে সবচেয়ে বেশি উজ্জল ও উওর আকাশে স্থির হয়।                                                                  হিন্দুস্থানে সহজে কেবলা নির্ধারণের  পদ্ধতিঃ                                                 হিন্দুস্তানবাসীদের কেবলার দিক তিনদিকে হওয়ায় কেবলা নির্ধারণ তিনভাবে হয়ে থাকে ১.বরাবর পশ্চিমে ২ কিছুটা উওরে ৩।কিছুটা দক্ষিণে ।সুতরাংয় যেখানে কেবলা বরাবর  পশ্চিমে সেখানে ধ্রুবতারাকে মাথার মাঝখানে বরাবর রাখবে । আর যেখানে কেবলা কিছুটা উওরে সেখানে ধ্রূবতারাকে মাথার মাঝখান বরাবর রাখবে। আর যেখানে কেবলা  কিছুটা উওরে  সেখানে  ধ্রুবতারাকে মাথার সামনের অংশে রাখবে ।আর যেখানে কেবলা কিছুটা দক্ষিণে সেখানে ধ্রূবতারাকে মাথার পিছন দিকে রাখবে।                                                                                             আর সূর্য  দেখে কেবলা নির্ধারণের পদ্ধতি(যা হিন্দুস্তানের জন্য উওম পন্থা) বছরের সব  চেয়ে বড় দিন তথা ২২ শে জুন অনুরুপ বছরের সবচেয়ে ছোট দিন তথা ২২ শে ডিসেম্বর সূর্য অস্ত যাওয়ার স্থান দেখা হবে। দুই স্থান  নির্ণয় করার পরে তার মধ্যবর্তি স্থানই হবে কেবলা।             অর্থাৎ এ দুই স্থানের  মাঝামাঝি যেই নুকতাটি থাকবে  সে দিকে ফিরে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে ।                                                এছাড়া কেউ কেউ কেবলা নির্ধা রণে েএকটি সহজ পদ্ধতি এভাবে বলে  থাকেন যে ,প্রতি বছর ২৭ মে ও ১৬ জুলাই সৌদি আরবের ঠিক বেলা  ১২ টায় সূর্য  কাবা বরাবর থাকে । অতএব যারা ঘর বা মসজিদের কেবলা নির্ধারণের করতে আগ্রহি তারা উক্ত তারিখদ্বয়ে সৌদি আরবের ঠিক বেলা ১২ টায় অর্থ াৎ বাংলাদেশের ৩ঃ১৭ মিনিটে সূর্যের অবস্থানের  প্রতি লক্ষ্য করে কেবলা নির্ধারণ করতে পারবেন । কেননা ঐ সময়ে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া কেবলামুখি হয়ে থাকে ।                                                                 এখন প্রশ্ন হলো,যদি কোনো ব্যক্তি কেবলা নির্ধারণের জন্য অংকশাস্‌ েএ বা অন্য কোন যন্‌এ ব্যবহার করে তাহলে তা জায়েজ হবে কি না?এবং নির্ধারিত দিকটি গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?                                                                                                                      উওরঃআল্লামা শামী রাহ ,এ বিষয়ে ফয়সালা দিতে গিয়ে লিখেছেন ,যে সকল স্থানে পুরোনো মসজিদ নেই সে সকল স্থানে তারকারাজী,অংকশাস্‌ েএ বা অন্য কোনো যনএ ব্যবহার করে তাহলে তা জায়েজ হবে কি না? এবং নির্ধারিত দিকটি গ্রহণযোগ্য হবে কিনা ?                                          উওরঃআল্লামা শামী রাহ.এ বিষয়ে ফয়সালা দিতে গিয়ে লিখেছেন ,যে সকল স্থানে তারকারাজী অংকশাসএ বা অন্য কোনো যনএ ব্যবহার করে কেবলার  দিক নির্ধারণ করা জায়েজ আছে বরং উচিত হলো যে ব্যক্তি এ শাস্‌ েএ জানে তার মাধ্যমে কাজ নেয়া ।                                                                              মরুভুমিতে তারকারাজী বা তার অনুরুপ কোনো বস্তুর বিবেচনা আবশ্যকীয় হওয়ায় উচিত। কেননা হানাফি ও অন্যান্য মাযহাবের ওলামায়ে কেরাম তারকারাজীকে গ্রহণযোগ্য নিদর্শন বলেছেন। সুতরাং তারকারাজীর মাধ্যমে নামাযের সময়সূচি ও কেবলা নির্ধারণ করা উচিত।                                                                            আর যে স্থানে পুরোনো মসজিদ রয়েছে,সেখানে যানি্‌েএক কোনো বস্তু দ্বারা কেবলা নির্ধারণের ক্ষে েএ ওলামায়ে কেরামের মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।                                                                                                                                     পুরোনো মেহরাব থাকা অবস্থায় তারকারাজী নিদর্শন  হওয়ার ক্ষে েএ মতানৈক্য রয়েছে। কেননা পুরোনো মেহরাব থাকলে (কেবলার দিক নির্ণয়ে) অনুমানের কোনো সুযোগ নেই।                                                                                      তবে আহনাফের নিকট গ্রহনযোগ্য মত হলো,মসজিদের অনুসরণ করা ।               তাই যেখানে পুরোনো মসজিদ আছে সেখানে পুরোনো মসজিদেরই অনুসরণ করা হবে । আর যেখানে পুরোনো মসজিদ নেই সেখানে চন্দ্র, সূর্য,তারকা অথবা অন্য কোনো হাতিয়ার ব্যবহার করা হবে।                                                                                                                   মানুষের জীবন-মরণ সুস্থতা -অসুস্থতা সবকিছুই মহান আল্লাহ তাআলার কুদরতি হাতে । তাই প্রত্যেক মুমিনের  উচিত হলো,জীবন চলার পথে সে যখন  যে অবস্থার সম্মুখিন হবে , সর্বাবস্থায় সে তারই বিধান জানবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে সচেষ্টা হবে।কেননা শরীআত শারীরিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে অসুস্থতা ও অপারগতার সময় তার  উপর অর্পিত বিধান কখনো শিথিল করেছে,কখনো অবস্থার ভিওিতে তার সাধ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছ। কিন্তু বর্তমানে  অনেকে  শরীয়তের  সঠিক বিধান না জানার কারনে কখনো শিথিলতা গ্রহণে সীমালঙ্ঘন করে থাকে ।এমনকি অনেকে বলে বসে যে ,ওযরের কোনো মাসআলা নেই’’বরং মাযুর ব্যক্তি শরয়ী হুকুমের আওতামুক্ত।আবার কখনো সহজ বিধানকে কঠিন করে ফেলে শরীআতের বিভিন্ন বিধান হয়ে ওঠে  প্রশ্নবিদ্ধ।অথচ ইসলামি শরীআহ একটি পরিপুর্ণ ও সার্বজনিন জীবন বিধান । এতে নেই কোনো কঠোরতা  নেই কোনো শিথিলতা। তাই শরীআত অসুস্থ ব্যক্তির নামাযের বিষয় কতটুকিু রুকসাত বা ছাড় দিয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অতিব জরুরি।

চেয়ারে বসে নামাযের বিধান ঃ

এক সময় তো এমন  ছিলো যে মসজিদে চেয়ার আনা এবং তাতে বসে  নামায পড়ার কল্পনাও করা যেত না । কিন্তু বিগত  কয়েক বছরে মসজিদে চেয়ারে বসে  নামায আদায়কারীর সংখ্যা এমন বৃদ্ধি পেয়েছে,যা দেখে সত্যি হতবাক হতে হয়। তাদের মধ্যে অনেকে তো শরীআতসম্মত ওযরের কারণেই চেয়ারে বসে  নামায আদায় করে । আবার কেউ  শরীআতসম্মত ওযরের কারণেই চেয়ারে বসে নামায আদায়ে সক্ষম ,এতদসত্বেও তারা নির্দ্বিধায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করে চলেছেন। আর এসব  অবস্থা মুলত চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিধান না জানার কারণেই হচ্ছে। তাই উক্ত বিষয়ের শরয়ী সমাধান নিম্নে আলোচনা করা হলো।                                                                                                       যে ব্যক্তি কিয়াম,রুকু-সিজদা কোনোটাই করতে সক্ষম নয়,সে যদি জমিনে বসে  নামায পড়তে সক্ষম হয়,তাহলে তার জন্য যেভাবে বসতে সহজ হয় সেভাবেই জমিনে বসে  ইশারায় নামায আদায় করবে (তবে তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় বসা ভালো)। এধরনের  ব্যক্তির জন্য চেয়ারে বসে  নামায পড়া জায়েজ আছে তবে অনুওম ।আর রুকু -সিজদা করতে সক্ষম ব্যক্তি যদি এমনটি করে তাহলে তার নামাযই হবে না ।                                     তবে হ্যা,যে ব্যক্তি জমিনে  বসে থাকতে সক্ষম নয়,অথবা তার জমিনে বসে নামায পড়তে খুব কষ্ট হয়। এমন ব্যক্তিও যদি জমিনে বসে কোনো কিছুর সাথে হেলান দিয়ে নামায পড়তে সক্ষম হয় তাহলে তার জন্য সেভাবেই নামায পড়া উওম।তবে চেয়ারে বসে নামায পড়ার ‍সুযোগ আছে। কিন্তু ইশারায় নামায আদায় করার জন্যও যথাসম্ভব চেয়ার ব্যবহার না করা উচিত।                                                                                                               সম্ভবত সে কারনেই অসুস্থ ব্যক্তির বিভিন্ন বিধান আলোচনার ক্ষে েএ চেয়ার বা উচু জায়গায় বসার বিষয়টি আলোচিত হয়নি।                                                                                রাসুল (সা) বলেন অসুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়বে।যদি এতে কষ্ট হয় তাহলে বসে নামায পড়বে।যদি তাতেও কষ্ট হয় তাহলে তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে ।

যদি অসুস্থ ব্যক্তি নিজের  শক্তিতে বসতে অক্ষম হয়,কিন্তু কোনো কিছুর উপর ঠেস লাগিয়ে অথবা মানুষ,দেয়াল বা বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসতে সক্ষম হয়, তাহলে সেভাবেই নামায পড়তে হবে ।যদি শুয়ে পড়ে তাহলে জায়েয হবে না।                                  উল্লিখিত দলীলদ্বয়ে অসুস্থ ব্যক্তির বিভিন্ন পর্যায় ও তার বিধানের আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চেয়ার বা কোনো উচু স্থানে বসার কথা উল্লেখ হয়নি। অথচ চেয়ার তখনো ছিলো এবং উচু কোনো জিনিসের ব্যবস্থাও ছিলো যা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আরামদায়ক। কিন্তু এ বিষয়টি আলোচনাতেই আসেনি। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ,অসুস্থ ব্যক্তির জমিনে বসে নামায আদায় করা সম্ভব হলে চেয়ারে না বসা উওম।

কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা

দাড়াতে অক্ষম কিন্তু রুকু-সিজদায় সক্ষম ব্যক্তির নামায                                             যে  ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারে না  কিন্তু রুকু-সিজদা করতে পারে । তবে লাঠি, দেয়াল বা  কোনো কিছুর সাথে  হেলান দিয়ে কিয়ামের পূর্ণ সময় দাড়িয়ে থাকতে পারে , তাহলে তার জন্য হেলান  দিয়েই দাড়িয়ে নামায পড়া জরুরি।বসে নামায পড়লে নামায হবে না।     

অনুরুপভাবে যে ব্যক্তি রুকু-সিজদা করতে পারে ,কিন্তু কেরাতের  পূর্ণ  সময় লাঠি ,দেয়াল বা অন্য কিছুর সাথে হেলান দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি যতক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারে .ততক্ষন দাড়িয়েই নামায পড়া  ফরয। এমনকি তাকবীরে তাহরীমা বলতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময়ও যদি দাড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে তাকবীরে তাহরীমা দাড়িয়েই বলতে হবে ।তারপর যখন অপারগ হয়ে যাবে তখন বসে পড়বে। এ ধরনের কেউ যদি প্রথম থেকেই জমিনে বসে নামায শুরু করে .তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে না ।আর এমন কারো জন্য চেয়ার টেবিলে বসেও নামায পড়ার সুযোগ নেই।                  সহিহ মহ হলো অসুস্থ ব্যক্তি যদি কোনো কিছুতে ঠেস লাগিয়ে অথবা লাঠি  বা খাদেমের কাধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারে ,তাহলে সে সেভাবেই দাড়িয়ে নামায পড়বে। এছাড়া অন্য কোনোভাবে নামায পড়া জায়েজ হবে না।                                                          অনুরুপভাবে যে ব্যক্তি রুকু-সিজদা করতে পারে ,কিন্তু কেরাতের পূর্ণ  সময় লাঠি ,দেয়াল বা অন্য কিছুর সাথে হেলান দিয়েও দাড়িয়ে থাকতে পারে না ,সে ব্যক্তি যতক্ষন দাড়িয়ে  থাকতে পারে ,ততক্ষণ দাড়িয়েই নামায পড়া ফরয। এমনকি তাকবীরে  তাহরীমা  দাড়িয়েই বলতে হবে। তারপর  যখন অপারগ হয়ে যাবে তখন বসে পড়বে। এ ধরনের কেউ যদি প্রথম থেকেই জমিনে বসে নামায শুরু করে .,তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে না । আর এমন কারো জন্য চেয়ারে টেবিলে বসেও নামায পড়ার সুযোগ নেই।                             আবু জাফর আল হিন্দুওয়ানি রাহ. বলেন  যদি কিছু সময়  দাড়াতে সক্ষম হয়,তাহলে  ততটুকুই  দাড়াবে ।যদিও তা এক আয়াত বা তাকবীর বলা পরিমান সময় হোক না কেন। তারপর  প্রয়োজনে বসতে পারবে ।যদি  এমনটি না করে ,তাহলে আমি আশঙ্কা  করছি  যে  ,তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে । আর এটি সঠিক মত । আমাদের ফুকাহায়ে কেরাম থেকে এর বিপরিত কোনো মত বর্ণিত নেই ।                           

দাড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকু সিজদায় অক্ষম ব্যক্তির নামায   ঃ

যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম কিন্তু রুকু -সিজদা করতে অক্ষম, অথবা রুকু করতে  সক্ষম। সে দাড়িয়ে বা বসে  যেভাবে  ইচ্ছা নামায  আদায়  করতে  পারবে । কিন্তু উওম  হলো ,সে জমিনে  বসে নামায আদায় করবে এবং ইশারায় রুকু  সিজদা করবে । এমন  ব্যক্তির জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়ারও সুযোগ  রয়েছে । তবে সেটা সুন্নত  পরিপন্থি হওয়ার কারনে  মাকরুহ বা অনুওম।                যদি কেউ দাড়াতে সক্ষম ,কিন্ত রুকু সিজদা করতে  অক্ষম ,তার জন্য দাড়ানো আবশ্যক নয় ।সে  বসে ইশারায় রুকু সিজদা  করে নামায আদায় করতে পারবে।কারণ  ‍সিয়াম নামাযের রোকন  হয়েছে তা সিজদায় যাওয়ার  মাধ্যমে হওয়ার কারণে ।কেননা এতেই সর্বোচ্চ সম্মান প্রকাশ  পায়।সুতরাং যে কিয়ামের পর সিজদা থাকবে না সে কিয়ামটা রোকন হবে না ।অতএব, সেক্ষে েএ সে স্বাধীন। তবে উওম হলো বসে  ইশারায় রুকু সিজদা করে নামায আদায় করা ।কেননা সেটা সিজদার সাথে বেশি  সামন্জস্যশীল।

উপরোক্ত বক্তব্যটিই  হানাফি ফকিহগণের  প্রসিদ্ধ মত।কিন্তু দলিলের বিচারে  অনেক  মুহাক্কিক  ফকীহের  দৃৃষ্টিতে এ মাসআলায় ফিকহে হানাফির ঐ বক্তব্য বেশি  শক্তিশালী যা ইমাম যুফার  ইবনে  হুযাইল রাহ,এর মাযহাব। আর সেটিই অন্য তিন ইমাম তথা ইমাম মালেক ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল  রাহ প্রমুখের মাযহাব। আর তা  হলো  যে ব্যক্তি জমিনের  উপর সিজদা করতে  অক্ষম সে যদি দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম  সেহেতু সে বসে  ইশারায় সিজদা করবে । জমিনে সিজদা  করতে অক্ষম হওয়ার  কারণে কিয়াম ছাড়া  যাবে না । কেননা কিয়াম নামাযের একটি স্বতনএ ফরয। কিয়াম   শুধুমাএ ঐ ব্যক্তির উপর ফরয নয়  যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায  আদায় করতে পারে না । তাই সিজদা  করতে অক্ষম হওয়ার  কারনে কিয়াম মাফ হবে না ।                 

Leave a Comment